Ajker Patrika

বোধ্য বিষ্ণু দে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ৪৮
বোধ্য বিষ্ণু দে

সেন্ট্রাল ক্যালকাটা কলেজে একসময় চাকরি করতেন তপন রায়চৌধুরী। সেখানে তিনি সহকর্মী হিসেবে পেয়েছিলেন কবি বিষ্ণু দেকে।

বিষ্ণু দে খুবই রসিক মানুষ। শুধু একটি বিষয়ে ছিলেন খুবই স্পর্শকাতর। তাঁর কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে কেউ কথা বললে তিনি চটে উঠতেন। সুনীল সেন সেই সুযোগটা নিতেন খুব। সুযোগ পেলেই তিনি বিষ্ণু দের কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করতেন।

একদিন এ রকম এক খোঁচার জবাবে বিষ্ণু দে বলেছিলেন, ‘আমার কবিতা মেয়েদের আর শিশুদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। মুশকিল হয় শুধু অর্ধশিক্ষিত মধ্যবিত্তদের।’
বিষ্ণু দের কবিতা শিশুরা বুঝে যাবে, এতটা ভাবা বাড়াবাড়ি। উত্ত্যক্ত হয়েই এ কথা বলেছিলেন তিনি। তবে কখনো কখনো তিনি চটুল কবিতাও লিখেছেন। যেমন 
দিলীপ সেনের বিয়ে উপলক্ষে তিনি খুবই সহজবোধ্য একটি কবিতা লিখেছিলেন, যার প্রথম পঙ্‌ক্তি ছিল, ‘দিলীপ সেনের কেন এত ঘোরাঘুরি’।

কলেজের পাশেই কমলালয় স্টোরের ভেতরে একটি চায়ের দোকান ছিল। চায়ের নেশা পেলে ক্লাস ফাঁকি দিয়েও সেখানে যেতেন অধ্যাপকেরা। তপন রায়চৌধুরী যেতেন, বিষ্ণু দে যেতেন। সেখানে চা খাওয়ানোর দায়টা মোটামুটি সবাই অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু বিষ্ণু দে এ খেলায় শামিল হতেন না। তিনি বেশির ভাগ দিনই সবাইকে নিজের পয়সায় চা খাওয়াতেন।

বিষ্ণু দের আরও একটি অবাক করা ব্যাপার দেখেছেন তপন রায়চৌধুরী। বিষ্ণু দে কলেজে আসতেন বাস অথবা ট্রামে। সেই বাস বা ট্রামে তিলধারণের ঠাঁই থাকত না। কিন্তু যখন বিষ্ণু দে নামতেন, তখন সবাই অবাক হয়ে লক্ষ করত, বিষ্ণু দের ধুতি বা পাঞ্জাবিতে কোনো ভাঁজ নেই।

কলেজের পর বাড়ি ফিরে বিষ্ণু দে অর্ধশায়িত হয়ে সুন্দর চাদরে ঢাকা একটি কুশনে মাথা রেখে বসে বা শুয়ে পড়তেন, কখনো বাখ শুনতেন, কখনো এলিয়ট পাউন্ডের কবিতা পড়তেন, কখনো পিকাসোর ছবির প্রতিলিপি দেখতেন। সেটাই ছিল তাঁর নিজস্ব সময়।

সূত্র: তপন রায়চৌধুরী, বাঙালনামা, পৃষ্ঠা ১৮০-১৮১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত