Ajker Patrika

নার্সারিতে গ্রামের চিত্র বদল

তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ১৯
নার্সারিতে গ্রামের চিত্র বদল

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিদ্যালয় থেকে একটি চারা পেয়েছিলেন হেমন্ত চন্দ্র বর্মণ। এ সময় গাছ রোপণের উপকারিতা বিষয়ে নানা পরামর্শও দিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। সেই কথা মনে গেঁথে গিয়েছিল। পরে চারাটি বাড়িতে এনে রোপণ করেন হেমন্ত। এটা ১৯৯০ সালের কথা। তারপর একে একে বেশ কিছু চারা সংগ্রহ করে বাড়ির আশপাশে লাগিয়ে দেন।

এখানেই শেষ নয়। গাছের নানা বিষয়ে আরও জানার পর হেমন্ত ১৯৯৪ সালে নিজেদের পতিত জমিতে ছোট পরিসরে গড়ে তোলেন ‘শান্ত নার্সারি’। যার সফলতা হিসেবে ১৯৯৮-৯৯ সালে জেলা পর্যায়ে গ্রাম্য খামার বনায়ন প্রকল্পে মিলে যায় সেরা নার্সারির পুরস্কার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বর্তমানে পীরগাছা উপজেলার গোবরাপাড়া গ্রামে প্রায় ৬০ বিঘা জমিজুড়ে ছড়িয়ে আছে হেমন্তের নার্সারি। এর মধ্যে ২০ বিঘা জমি নিজের, বাকিটুকু ইজারা নেওয়া। এই নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০ লাখ চারা গাছ রয়েছে। প্রতিদিন কাজ করছেন ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিক। এখান থেকে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করা হচ্ছে।

গত ১০ বছর ধরে উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষ মেলায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জিতে চলেছেন হেমন্ত। তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলায়।

গোবরাপাড়া গ্রামে হেমন্তের সাফল্য দেখে গড়ে উঠেছে আরও ২৫ থেকে ৩০টি নার্সারি। যাতে অভাব ঘুচেছে প্রায় ৩০ পরিবারের। নার্সারি করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ওই গ্রামের বেকার যুবকেরা। প্রতিদিন দূরের ব্যবসায়ীরা এই গ্রামে এসে ট্রাক, ভ্যান, রিকশা ও ট্রলিতে করে চারা নিয়ে যান। চারা ঘিরে সব সময় কর্মচঞ্চল থাকে এলাকাটি।

সরেজমিনে শান্ত নার্সারিতে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজের সমারোহ। শুধু গাছ আর গাছ। শ্রমিকেরা কাজ করছেন, হেমন্ত নিজেও বিভিন্ন চারা গাছের পরিচর্যা করছেন। ট্রাকযোগে বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য চারা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে।

নার্সারির চারাগুলোর মূল্য গাছের প্রজাতি ও আকারের ওপর নির্ভর করে। প্রতিটি চারা ৫ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়।

নার্সারিতে কাজ করা শ্রমিক লক্ষণ চন্দ্র বলেন, ‘আমরা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন মাসিক ৯ থেকে ১২ হাজার টাকায় এখানে কাজ করছি। একসময় বেকার ছিলাম। এখন নার্সারির কল্যাণে সারা বছর হাতে কাজ থাকছে।’

শান্ত নার্সারির উদ্যোক্তা হেমন্ত জানান, এখান থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। নার্সারি একটি লাভজন ব্যবসা। বাজারে চারা গাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রংপুর অঞ্চলের বড় নার্সারিগুলোর মধ্যে শান্ত নার্সারি অন্যতম বলে জানান পীরগাছার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহসানুল হক। তিনি বলেন, এখানে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সম্ভাবনাময় এ খাতকে বড় করতে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম জানান, হেমন্ত চন্দ্র এখন গোবরাপাড়া গ্রামের আদর্শ। তাঁকে দেখে গ্রামটি এখন নার্সারি গ্রামে পরিণত হয়েছে।

সাইফুল আলম বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে নার্সারিগুলো পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নিয়মিত মেলার আয়োজন করে সফলদের পুরস্কৃত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত