Ajker Patrika

চিৎকার দিতেও লজ্জা প্রসূতির, শোনার ভয়

শ্যামল চন্দ্র দাস, মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর)
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ১৩
চিৎকার দিতেও লজ্জা প্রসূতির, শোনার ভয়

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের নারায়ণপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের দুটি কক্ষে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবা বিভাগের কাজ। এর বিপরীত পাশের একটি কক্ষে প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ এবং অপর কক্ষটি প্রসূতি মায়েদের প্রসবসেবা দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে লোকজনের ভিড়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন সেবা নিতে আসা গর্ভবতী মায়েরা।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে আসা পয়ালী গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সব কথা বলতে পারি না। পাশের কক্ষে অনেক মানুষের আনাগোনা। পুরুষদের গায়ের সঙ্গে ধাক্কাও লাগে।’

সরেজমিনে রহিমার এই বক্তব্যের সত্যতা মিলে। জানা যায়, পয়ালী গ্রামে অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দোতলা আবাসিক ভবনের নিচের তলায় আটটি কক্ষের দুটিতে ২০১০ সাল থেকে চলছে ইউনিয়নের তথ্য ও সেবার কাজ। বাকি ছয়টি কক্ষের একটি কৈশোরবান্ধব কর্নার, একটি অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি), একটি স্টোররুম ও একটি প্রসবকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া একটি কক্ষে স্বাস্থ্যকর্মী ও অপরটিতে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক বসেন। একই ভবনে দুটি কার্যক্রম চলায় এবং ব্যাপক মানুষের আনাগোনার কারণে বিব্রত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা গর্ভবতী নারীরা।

সেবাপ্রার্থী জোহরা বেগম বলেন, ‘প্রসব বেদনা নিয়ে মায়েরা এখানে ভর্তি হন। এ অবস্থায় অনেক সমস্যা হয়। প্রসব যন্ত্রণায় মায়েরা চিৎকার দিলে পাশের কক্ষের লোকজন শুনতে পান। সেখানে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। এতে করে মা ও বাইরের লোকজন উভয়কেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমরা চাই এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন শুধু স্বাস্থ্যসেবাই দেওয়া হয়। তথ্য সেবাকেন্দ্রটি যেন অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়।’

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তথ্যমতে, এখানে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ১৬টি এবং বছরে গড়ে ১৮০ থেকে ১৯০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়। উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের মায়েরা এখানে সেবা নিচ্ছেন। ২০১৩ সাল থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১ হাজার ১৭০টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক খালেদা আক্তার বলেন, ‘ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্রের কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় বাইরের মানুষ শুনতে পাওয়ার লজ্জায় প্রসূতি মায়েরা চিৎকার দিতেও ভাবেন। নিরাপদ মাতৃত্বের স্বার্থে অচিরেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তথ্য সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল মোস্তফা তালুকদার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ভবনের অভাবে অস্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তথ্যসেবা চালু রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, শিগগিরই তথ্যসেবা কেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়ার।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, ‘নারীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসাসেবা নিতে পারেন এবং কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে জন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত