Ajker Patrika

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জীবন

নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৪
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত জীবন

নওগাঁয় ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। চলতি সপ্তাহের বিভিন্ন সময়ে রোদের দেখা মিললেও গত দুই দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। এ অবস্থায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১২ জানুয়ারি শিলাবৃষ্টির পর থেকে জেঁকে বসেছে শীত।

নওগাঁর বদলগাছীর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, নওগাঁ জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত বুধবার ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল বৃহস্পতিবার নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে পথঘাট। সঙ্গে রয়েছে কনকনে বাতাস। শীতার্ত ও ছিন্নমূল মানুষ শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য আগুন পোহাচ্ছে। এ ছাড়া ঠান্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষিশ্রমিকেরা। বোরো চাষের ভরা মৌসুম চললেও কনকনে ঠান্ডায় শ্রমিকেরা ঠিকমতো মাঠে কাজ করতে পারছেন না।

নওগাঁ সদরের ফতেহপুর মাঠে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি জমিতে সেচ দিয়ে রেখেছেন কৃষকেরা, কিন্তু তীব্র শীতের কারণে ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। ওই এলাকার কৃষক সবুর আলী বলেন, ‘যে ঠান্ডা, এমনি থাকা যায় না, জমিত নামি কেমন করি? রোয়া গাড়া জরুরি হয়া গেছে। দিনোত যেমন ঠান্ডা, তেমন বাতাস। ঘরের বাইরে বেরা যাচ্ছে না।’

নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকায় গতকাল সকাল ১০টায় কথা হয় রিকশাচালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডায় হাত-পা টাটাচ্চে। হাত দিয়ে রিকশার হ্যান্ডেল ঠিক মতোন ধরা পারিচ্ছি না। রাস্তায় বের হওয়া কঠিন হয়ে পরিচে।’

বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের বেলুন মেকার নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গতকাল বুধবার ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন-চার দিন ধরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করে।

এদিকে শীতে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা সুফিয়া খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ৩৩ জন ডায়রিয়া ও ১০ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। শিশু বিভাগে মোট চিকিৎসা নিচ্ছে ৫৭ জন, যাদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১৫ দিন ধরে রোগীর সংখ্যা একটু বেশি।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ১২ জানুয়ারি শিলাবৃষ্টির পর থেকে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। কুয়াশা কম থাকলেও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়ছে এই অঞ্চলের মানুষ। এতে শীত নিবারণের জন্য ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছুটছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

ঠান্ডা বাতাসে রিকশাচালক, খুদে ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন ঘর থেকে বের হচ্ছে না।

মাসুদুর রহমান নামে এক রিকশাচালক বলেন, সন্ধ্যার পর ঠান্ডা বাতাস বাড়তে থাকায় রিকশা চালানো যায় না। তার পরও সংসার চালাতে টাকার দরকার। তাই শীতের মধ্যেও চালাতে হবে।

এদিকে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম পোশাকের বেচাকেনা বেড়ে গেছে। জেলা শহরের বিভিন্ন বাজারে শীতের পোশাক ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। 
পোশাক কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা বলেন, তাঁরা শিশুদের জন্য গরম কাপড় কিনতে এসেছেন। দোকানগুলোতে গরম পোশাক রয়েছে, তবে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত