Ajker Patrika

হাস্যকর এক ‘সরকারি’ দল

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৫
হাস্যকর এক ‘সরকারি’ দল

বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে যে ক্রেজ ছিল, সেটা এখন কিছুটা স্তিমিত। নানা ধরনের ফ্যাকড়ায় পড়ে ক্রিকেট দ্যুতিহীন হয়ে যাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে যদি ছিটেফোঁটা সাফল্য কিছু এসে থাকে, তবে তা আসছে মেয়েদের কাছ থেকে। ছেলেরা প্রতিযোগিতায় গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলছে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, ভালো কোচ, ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকাণ্ড, খেলোয়াড়দের অনুশীলনসহ নানা জটিল বিষয় এখন উঠে আসছে এবং বোঝা যাচ্ছে, সমন্বয়হীনতা, পারস্পরিক বিশ্বাসবোধের অভাব একটি দলকে কতটা অসহায় করে তুলতে পারে।

ক্রিকেট আমাদের সর্বশেষ ‘আনন্দ’টি দিয়েছে বিপিএল নিয়ে। রীতিমতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি’ স্বত্বাধিকারী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল বিসিবি। সেই আহ্বানে সাড়াও পড়েছিল। কিন্তু ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখালেও নানা বিবেচনায় ৮টি প্রতিষ্ঠানকে মালিক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তার দুটো শর্ত পূরণ করতে না পারায় নেওয়া হয় আজব ও সহজ সিদ্ধান্তটি। বিসিবিই চালাবে একটি দল। এ ছাড়া যেন আর কিছুই করার ছিল না। এহেন পরিস্থিতিতে নিলাম যে পিছিয়ে দেওয়া যেত, এ রকম কথা একবারের জন্যও ভাবেনি কর্তৃপক্ষ। বরং ভেবেছে, নিজেরাই একটি দলের মালিক হয়ে প্রতিযোগিতায় নামবে!

নানা ধরনের হাস্যকর ঘটনাগুলো যাঁরা ঘটিয়ে চলেছেন, তাঁরা একবারও দেশের ক্রিকেটের স্বার্থ নিয়ে ভাবছেন কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। আজকের পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছে, এটা বিসিবির ‘সরকারি’ দল। কথাটা মিথ্যে নয় মোটেই। এই দলেই নাম লিখিয়েছেন বর্তমানে সাদা বলের দুই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর তামিম ইকবাল। আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজাও।

১০ বছর ধরে বিপিএল চলছে। কোনো বছরেই তা প্রশ্নহীন থাকেনি। আরও বড় কথা, প্রশ্নগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঢাকাকে ঘিরে। ঢাকাকে নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে কেন, সেটা কি আলোচনা হয়েছে কোথাও?

সরকারি দল হিসেবে একটি দল যদি প্রতিষ্ঠা পেয়েই যায়, তাহলে প্রতিযোগিতায় স্বচ্ছতা আর জবাবদিহি থাকে কোথায়? এ যেন পরিবহন সেক্টরের মতো ব্যাপার। যিনি পরিবহন মালিক, তিনিই শ্রমিকনেতা, তিনিই সরকারি দলের সাংসদ। সুতরাং তিনি এ ক্ষেত্রে কার স্বার্থ দেখবেন, সে প্রশ্ন সব সময়ই থাকবে অমীমাংসিত।

যে কটি পরিচয়ে আমরা গর্ববোধ করার পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি, তার মধ্যে ক্রিকেট রয়েছে সামনের সারিতে। এটা যে আমাদের অর্জন এবং এই অর্জন টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বমহলেরই যে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহি দরকার, সে কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি ক্রমেই। যদি মাঠে গড়ানোর আগেই নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাহলে খেলোয়াড়রাই-বা পারফর্ম করবেন কী করে?

আপাতত এই কথাটাই বলি: ফ্র্যাঞ্চাইজির টাকাপয়সা লেনদেনের সঙ্গে বিসিবি জড়ালে প্রতিযোগিতা স্বচ্ছ হয় না। সরকারি দল যদি নিজেকে জনগণ বলে পরিচয় দিতে চায়, তাতে তার দলীয় তকমা উধাও হয়ে যায় না। এই দিকটি বিবেচনা করে এ ধরনের হাস্যকর প্রবণতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিসিবিকেই সচেষ্ট হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত