Ajker Patrika

ছুটির আনন্দ ও বেদনা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ০৯: ৫৭
ছুটির আনন্দ ও বেদনা

এবার ঈদের ছুটি পাওয়া গিয়েছে একটু বেশি। ফলে ঈদের উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগও তুলনামূলক বেশি ছিল। আগের দুই বছরের চারটি ঈদ গেছে নিরানন্দে, করোনার কারণে 

সবকিছু ছিল সীমিত, নিয়ন্ত্রিত। এবার সব ছিল অবাধ। ঢাকা ছেড়ে আপন আলয়ে ফেরা মানুষেরও এবার ভোগান্তি হয়েছে কম। প্রতিবছর ঈদযাত্রা যতটা বিড়ম্বনার হয়, এবার ততটা হয়নি। ঢাকা কিছুটা ফাঁকা হলেও একেবারে জনশূন্য ছিল না। যাঁরা ঢাকায় ছিলেন, তাঁদের ছুটি কাটানোর উপায়-উপকরণ নেই বললেই চলে। ঢাকায় জনসংখ্যার তুলনায় বিনোদনকেন্দ্র একেবারেই কম। সেটা বড়দের জন্য যেমন সত্য, ছোটদের জন্য আরও বেশি সত্য।

ছোটদের নিয়ে বেড়াতে বের হয়ে এবার অভিভাবকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ছোটরাও হয়তো আনন্দের বদলে হয়েছে বিরক্ত। কারণ, চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, হাতিরঝিল কিংবা ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর— সবগুলো জায়গায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। গিজ গিজ করা মানুষের মধ্যে বিনোদন কোথায়! অথচ নাগরিকদের জন্য বিনোদন খুবই জরুরি। বিনোদন মানে তো শুধু নাচ-গান, নাটক, সিনেমা নয়। খোলা জায়গায় প্রশান্তির শ্বাস নেওয়া, একটু নিরিবিলি বসে থাকা, গাছগাছালি, ফুল-পাখি দেখাও তো বিনোদন। স্থাপনার পর স্থাপনা করে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিচ্ছি কিন্তু নাগরিকদের জন্য, শিশুদের জন্য বিনোদনের জায়গা তৈরি করছি না। এই অভাব পূরণের জন্য ২০১২ সালের শেষ দিকে শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গার পাড়ে গাছ লাগিয়ে ইকোপার্ক তৈরি করা হয়। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শিশুদের জন্য পাইরেট শিপ, রোলার কোস্টার, সুইং চেয়ার, ফ্রিজবিসহ ২৪টি রাইড রয়েছে পার্কটিতে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ রাইডগুলোতে নেই যথেষ্ট আধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা। এমনকি রোলার কোস্টারের মতো রাইডারে কোনো সিট বেল্ট নেই।

এই পার্কে ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে রাব্বী নামের স্কুলছাত্রের। সকালে বাবা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিল ১৩ বছরের রাব্বী। বাসায় ফিরে ফিরনি, সেমাই খেয়েই বেরিয়ে পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে। ছয় বন্ধু মিলে গিয়েছিল বুড়িগঙ্গা ইকোপার্কে। সেখানে কয়েকটি রাইডে ওঠার পর ছয়জন মিলে রোলার কোস্টারে ওঠে। হঠাৎ চলন্ত রোলার কোস্টার থেকে ছিটকে পড়ে রাব্বী। রোলার কোস্টারের পিলারের সঙ্গে আঘাত লেগে মাথা ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল রাব্বীর মা-বাবা। এ ঘটনায় রাব্বীর আত্মীয়স্বজনের ঈদের খুশি উবে গিয়ে কান্নার রোল পড়েছে। রাব্বীর বড় ভাই দুবাই থাকে। পড়াশোনা বেশি করেনি। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল রাব্বী অনেক পড়াশোনা করবে। কিন্তু সেই সাধ আর পূরণ হলো না। এই পরিবারটির কাছে এর পর থেকে ঈদ আসবে আনন্দের বার্তা নিয়ে নয়, বেদনার অশ্রু ঝরিয়ে। আনন্দের দিনে এমন বিষাদ সত্যি কষ্টের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত