Ajker Patrika

এক শ্রেণিকক্ষের বিদ্যালয়

বাবলু মোস্তাফিজ, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১২: ০৩
এক শ্রেণিকক্ষের বিদ্যালয়

মাত্র একটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে চলেছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের পরানখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মূল ভবনের মাত্র দুটি কক্ষের একটি অফিসকক্ষ আর একটিতে চলে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। এভাবেই দিনের পর দিন শ্রেণিকক্ষের সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক পাঠদান। পড়ালেখার প্রতি বিমুখ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা এবং মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন শিক্ষকেরা।

গতকাল শনিবার বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একতলা পাকা ভবনে দুটি কক্ষ। তার একটি অফিসকক্ষ। বাকি একটি কক্ষে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলছে। পাশে রয়েছে বিদ্যালয়টির তিন কক্ষের পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ভবন। ভবনটির টিনের চালে জং ধরেছে। চালে ছোট–বড় ছিদ্র। একটু বৃষ্টিতেই তা দিয়ে পানি পড়ছে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে। এমন অবস্থার মধ্যেই সেখানে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাস চলছে।

আরও দেখা গেছে, পাশের পরানখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুটি পরিত্যক্ত শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যে দুটি কক্ষে ক্লাস চলছে তার টিনের চালেও ধরেছে জং। চালের কোথাও কোথাও আবার টিন নেই। এখানেও সামান্য বৃষ্টিতে চাল বেয়ে পানি পড়ছে। পানি জমেছে শ্রেণিকক্ষে। এত দুর্ভোগ থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে এর মধ্যেই ক্লাস নিতে হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শ্রেণি সংকটের কারণে ভাঙা–চোরা টিনের ঘরে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি পড়ে বই-খাতাসহ তারাও ভিজে যায়। কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় শ্রেণিকক্ষের মেঝে। যতক্ষণ বৃষ্টি হয় ততক্ষণ ক্লাস বন্ধ থাকে। বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতিতে তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, পরানখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও জাতীয়করণ হয় ১৯৭৩ সালে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৬২। অনেক পুরোনো বিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়টিতে নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। বাধ্য হয়ে স্কুলের পাশে অবস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই কক্ষের টিনের ছাউনির পরিত্যক্ত ভবনকে ব্যবহার করছেন তাঁরা। সেখানে শিক্ষার্থীদের কোনো রকমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

পরানখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা জানান, ২০১৮ সালে তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তাঁর যোগদানের আগেই বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনটি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। তাঁর আশা খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে ক্লাস করছে। বৃষ্টির সময় ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়। নিজেদের টিনশেড ভবনের টিনের চালের অবস্থাও জরাজীর্ণ। সেখানেও পানি পড়ে। বাধ্য হয়ে পরানখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ একটি ভবনে কোনো রকমে ক্লাস নিচ্ছি। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষকদের প্রাণের দাবি।’পরানখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির এমন অবস্থা। এ অবস্থা দেখে ক্লাস নেওয়ার জন্য আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনশেড ভবনের দুটি কক্ষ তাঁদের দিয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আহসান আরা বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা উপজেলার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের আবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। জেলা অফিস ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই অনুমোদন পাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীনেশ সরকার বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৩টি নতুন ভবন ও ২টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের আবেদন জেলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তালিকায় পরানখালি সরব বিদ্যালয়টি রয়েছে। আশা করি দ্রুত ভবনের সমস্যা কেটে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত