Ajker Patrika

জেলেদের দেওয়া ৩২ ছাগলের ১৩টির মৃত্যু

শ্যামল চন্দ্র দাস, মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর)
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫৪
জেলেদের দেওয়া ৩২ ছাগলের ১৩টির মৃত্যু

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা ৩২টি ছাগলের ১৩টিই মারা গেছে। গত ২৬ জানুয়ারি বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় নিবন্ধনকৃত ১৬ জেলেকে দেওয়া হয় ছাগলগুলো। গত কয়েক দিনে ছাগলগুলোর মৃত্যুতে হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। জেলেদের দাবি, অল্প বয়সী ও রোগাক্রান্ত ছাগল দেওয়া হয় তাঁদের। ১৩টি ছাগল মারা যাওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারাও।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর কুমিল্লা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার জেলেদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৬০টি ছাগল বরাদ্দ হয়। ছাগলগুলো ঠিকাদারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। ছাগলগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয় ৮ হাজার টাকা। গত ২৬ জানুয়ারি নিবন্ধনকৃত ১৬ জন জেলেকে দেওয়া হয় ৩২টি ছাগল।

তবে ওই ছাগলগুলোর মধ্যে মতলব পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরমুকুন্দি গ্রামের মিলন সরকার, আনোয়ার হোসেন প্রধান, বোরহান প্রধান, সাজু মিয়া ও জাহাঙ্গীরের দুটি করে ছাগল এবং আলী আক্তার সরকার, মোজাম্মেল সরকার ও জাকির হোসেনের একটি করে ছাগল কয়েক দিনের ব্যবধানে মারা যায়।

জেলেদের অভিযোগ, তাঁদের যে ছাগল দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর বয়স অনেক কম এবং সেগুলো রোগাক্রান্ত ছিল। ছাগলগুলো দেওয়ার সময়ই জেলেরা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলেছিলেন আরও বড় (বয়স্ক) ছাগল দিতে। কিন্তু তিনি সে কথা রাখেননি।

জেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ছাগলটি পাওয়ার একদিন পরেই মারা গেছে।’

বোরহান প্রধান বলেন, ‘আমার ছাগলের মৃত্যুর বিষয়টি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনকে জানাই। তিনি মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলেন।’ পরবর্তীতে ওই মৎস্য কর্মকর্তা ছাগলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাঁকে অফিসে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলে আক্তার সরকার বলেন, ‘আমার দুটি ছাগলের একটি মারা গেছে। টিকে থাকা ছাগলটিকে এ পর্যন্ত হাজার টাকার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। আমাদের যে ছাগলগুলো দেওয়া হয়েছে তার আনুমানিক বাজারমূল্য তিন হাজার টাকার বেশি হবে না।’

জেলে মিলন সরকার বলেন, যে ছাগল দেওয়া হয়েছে এগুলো সব দুধের ছাগল। মায়ের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনার কারণেই এগুলো দুর্বল এবং আকারেও ছোট। ছাগল পাওয়ার পর অনেক ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যাঁদের ছাগল মারা গেছে পরবর্তীতে তাঁদের ছাগল দেওয়া হবে। আমি নিজে ঠিকাদারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘ছাগলগুলো রোগাক্রান্ত বা পরিপক্ব হওয়ার আগে মায়ের দুধ ছাড়িয়ে নেওয়ায় পুষ্টিহীনতার কারণে মারা যেতে পারে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় বিতরণকৃত ছাগলের মৃত্যুর বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি।’

এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বরাদ্দের বিপরীতে কম দামের ছাগল বিতরণ করে ঠিকাদার ও মৎস্য কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। সেই সঙ্গে উপজেলার জেলেদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৬০টি ছাগল দেওয়ার কথা থাকলেও ৩২টি বিতরণ করা হয়। বাকি ছাগলগুলো কাদের দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত