মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষণ গণনার সময় শুরু হতে যাচ্ছে। তার পূর্বক্ষণেই ২৮ অক্টোবর যুগপৎ আন্দোলনকারীদের মহাসমাবেশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর নাম দিয়েছেন ‘মহাযাত্রা’। এখান থেকেই এই আন্দোলনকে তাঁরা নতুন পর্বে উন্নীত করার নিশ্চয়ই কোনো ছক কষছেন। সেটি ২৮ তারিখেই কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। তবে এখনই বোঝা যাচ্ছে, এই আন্দোলনের আসল সঙ্গীরা এত দিন নেপথ্যেই ছিল। এখন দু-একটি দল তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা দিচ্ছে।
জামায়াতে ইসলাম ২৮ তারিখ শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে চেয়েছে। সেই অনুমোদন তারা না পেলেও ঘরে বসে থাকার দল জামায়াত নয়। বিগত দিনগুলোতেও তারা পুরোপুরি প্রকাশ্যে না এলেও মাঝেমধ্যে দলগতভাবে আসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএনপি এবং অন্যদের সভা-সমাবেশগুলোতে তাদের নীরব উপস্থিতি খুব একটা অজানা বিষয় নয়। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ২৮ তারিখের কর্মসূচি নিয়ে গোপনে আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যদিও বিএনপি বেশ আগেই গোপনে জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করে রেখেছিল। সে ব্যাপারেও গণমাধ্যমে তখন কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। বিএনপি সেসবের প্রতিবাদ করেনি।
জামায়াত ছাড়াও খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও হেফাজতে ইসলামের একটি অংশ ২৮ তারিখের আগেই ঢাকায় তাদের দলীয় জনসভা করার কথা বলেছে। তবে এই আন্দোলনের শেষ পর্বে বিএনপির মূল ভরসা হবে জামায়াতসহ বিভিন্ন ইসলাম নামধারী রাজনৈতিক দল। কারণ জামায়াত একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। তাদের ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর তাণ্ডব সবারই দেখা বিষয়। এবার তারা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করবে, তা ২৮ তারিখ থেকে বোঝা যেতে পারে। তবে যুগপৎ আন্দোলনে সরকার উৎখাত যদি সফল হয়, তাহলে বিএনপি একাই নয়, জামায়াত এবং ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
এত দিন বলা হয়েছিল, এই আন্দোলন গণতন্ত্র, দেশরক্ষা, জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদির জন্য করা হচ্ছে। তাই এই আন্দোলনের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ভাষায়, কেবল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রয়েছে। কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে তাদের ঐক্য হয়নি। বিএনপি নিজে দলগতভাবে কতটা অসাম্প্রদায়িক, তা নিয়ে রাজনীতিসচেতন মহলের মিলিয়ন প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে থাকা অতীত উগ্র বাম রাজনীতির কিছু নেতা আন্দোলনের সময় বিএনপিকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বলে দেশি-বিদেশি মহলকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেকোনো নির্বাচন এলেই বিএনপির ভেতরের স্বরূপটি ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না। ’৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত ভোট প্রদানে ভাগাভাগির কৌশল গোপনে নিয়েছিল। নির্বাচনের পরই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে। সেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির মূল শরিক ছিল, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনও করেছিল জামায়াতের সঙ্গে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও বিএনপি জামায়াতের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এই নৈকট্য আদর্শেরও বটে। অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল বিএনপিকেই তাদের আদর্শিক মিত্র বলে মনে করে। বাংলাদেশের রাজনীতির এই বাস্তবতা বিএনপির কিছু কিছু নেতা অস্বীকার করলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিএনপি বাংলাদেশকে কতটা ডান, ধর্মাশ্রয়ী, ভারতবিরোধী, সাম্প্রদায়িক এমনকি উগ্র সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালেই প্রমাণিত হয়েছে।
সুতরাং বর্তমান যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি শুরু থেকেই ধর্মাশ্রয়ী দলকে দূরে রাখার যে কৌশল নিয়েছিল, সেটি ছিল আন্দোলনের ছকের প্রথম স্তর। সেই স্তরে জামায়াতসহ ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে দূরে রাখা হয়। এটি দেশের অভ্যন্তরে বামসহ আওয়ামীবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে কাছে পাওয়ার সহজ হিসাব। আরও সহজ হিসাব হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বকে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ধারণা দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন লাভ করা।
পশ্চিমা বিশ্ব ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে নিজেদের বলয়ে রাখতে চায়। সেই বিবেচনার সমীকরণটি হয়তো এক মোহনায় যুক্ত হয়েছে। সে কারণেই পিটার হাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচন নিয়ে এত নজরদারি, এত দৌড়ঝাঁপ দেখতে পাওয়া যায়। বিএনপি ও মিত্র দলগুলো সেই ছক ব্যবহার করে ২৮ তারিখে ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে ‘মহাযাত্রার’ কী কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে, সেটি আগাম বোঝা সম্ভব নয়। তবে ২৮ তারিখের পর থেকে ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বিএনপি এবং এর সঙ্গে থাকা নামসর্বস্ব দলগুলো প্রতিদিনের কর্মসূচির ছক আঁকতে থাকবে। সেটি তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরেও হতে পারে।
অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি শান্তি ও উন্নয়নের নামে যে সমাবেশগুলো এ পর্যন্ত করে এসেছে, সেগুলো মূলত যুগপৎ আন্দোলনকারীদের রাস্তার আন্দোলনের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য করা হয়েছিল। সেদিক থেকে তারা অনেকের দৃষ্টিতেই সফল, অনেকেই আবার এটিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছেন।
২৮ তারিখ শনিবার সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি অফিস খোলা থাকে। ঢাকা শহরে গত কয়েক মাস শুক্র-শনিবারগুলোতে বিরোধীদের এবং সরকারি দলের সমাবেশের কারণে মানুষের চলাচলে বেশ বিঘ্ন ঘটেছিল। ২৮ তারিখ ঢাকা শহরে আদৌ মানুষ বাইরে যেতে পারবে কি না, তা নিয়েও অনেকের মধ্যে প্রশ্ন বা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, যুগপৎ আন্দোলনকারী এবং জামায়াতসহ ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও সেদিন মাঠে থাকবেন। এ নিয়ে প্রতিদিনই উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কথা বলার চেষ্টা করছে। বিএনপির মহাসচিব বলছেন, এবার তারা সফল হবেনই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সতর্ক করে বলে দিয়েছেন, শান্তি ভঙ্গ করা হলে তাঁরা চুপ করে থাকবেন না।
ঢাকায় বিরোধী দলের কয়েক লাখ নেতা-কর্মী সমবেত হলেই সরকার উৎখাত হয়ে যাবে—এমন ধারণার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব শর্তে তাদের মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেবে, তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। বিরোধী দল থেকে বলা হচ্ছে, তারা শান্তিপূর্ণ উপায়েই মহাসমাবেশ করবে। এত দিন বলা হয়েছিল, মহাসমাবেশ শেষে কর্মীরা যাঁর যাঁর বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু এখন বিভিন্ন গণমাধ্যম নানা ধরনের প্রতিবেদনে যেসব ধারণা দিচ্ছে, তাতে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিবেদনের শিরোনামই করেছে সরকারি দল ‘আক্রমণাত্মক’ থাকবে। পাশেই বিরোধী দল সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা থাকবে ‘সতর্ক’। আবার কোনো কোনো গণমাধ্যমে ঠিক বিপরীত কথাই বলা হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে না গণমাধ্যমগুলো কীভাবে এখানে নিশ্চিত হয়ে এ ধরনের আগাম বার্তা দিচ্ছে।
সরকারি দল আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করলে বিরোধীরা নিশ্চুপ থাকবে—এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সরকারি দলকে বেশি শান্ত ও সতর্ক থাকতেই হবে। সরকারের রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলোই আইন ও বিধিসম্মতভাবে ব্যবস্থা নেবে, সেটিই সবার কাম্য। এ ধরনের টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সরকার ও সরকারি দলকে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে—এমনটিই সচেতন মানুষ বিশ্বাস করে। যারা ভুল করবে, তাদের ঘাড়েই দোষ পড়বে। তখন প্রতিপক্ষকে দায়ী করে নিজেকে খুব বেশি সাধু দেখানো যাবে না। সেটি সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের জন্যই অভিন্ন। তবে বিরোধী দলের মাথায় ২৮ তারিখের পরই কর্মসূচির নানা ছক যেমন রয়েছে, সমর্থকদেরও নানা গোষ্ঠী রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এবারের এই আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এরই মধ্যে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেই বিতর্কে শক্তিধর কোনো কোনো রাষ্ট্র ছোটখাটো আকারে হলেও অংশ নিচ্ছে। আবার অনেক রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থেই নীরবে পর্যবেক্ষণ করছে।
একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যখন মাঠে নামার জন্য থাকার কথা, তখন সেদিকে কারও কোনো মনোযোগ নেই। এটা কি প্রকৃত সত্য নাকি এটাও আরেক ছক? নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে দেশে সব রাজনৈতিক দলই আন্দোলন করতে পারে। তখন সরকারের পতন ঘটানো হলে সেটিকে কেউ বাড়াবাড়ি বলতে পারে না। কারণ ঘোড়ার গাড়ির সম্মুখেই ঘোড়া থাকে, গাড়িকেই টেনে নেয়। এখন যা চলছে, তা ঘোড়ার আগে গাড়ি বসিয়ে দেওয়া। রাজনৈতিক কোনো আন্দোলনের ব্যাকরণেই এটিকে সমর্থন না করলেও যাদের ছক এঁকে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা রয়েছে, তারা সে পথেই হেঁটেছে, আরও হাঁটবে হয়তো। সুতরাং আওয়ামী লীগ, সরকার এবং ১৪ দল এসব রাজনৈতিক কৌশল, সমীকরণ, ছক ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা তাদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষণ গণনার সময় শুরু হতে যাচ্ছে। তার পূর্বক্ষণেই ২৮ অক্টোবর যুগপৎ আন্দোলনকারীদের মহাসমাবেশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর নাম দিয়েছেন ‘মহাযাত্রা’। এখান থেকেই এই আন্দোলনকে তাঁরা নতুন পর্বে উন্নীত করার নিশ্চয়ই কোনো ছক কষছেন। সেটি ২৮ তারিখেই কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে। তবে এখনই বোঝা যাচ্ছে, এই আন্দোলনের আসল সঙ্গীরা এত দিন নেপথ্যেই ছিল। এখন দু-একটি দল তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা দিচ্ছে।
জামায়াতে ইসলাম ২৮ তারিখ শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে চেয়েছে। সেই অনুমোদন তারা না পেলেও ঘরে বসে থাকার দল জামায়াত নয়। বিগত দিনগুলোতেও তারা পুরোপুরি প্রকাশ্যে না এলেও মাঝেমধ্যে দলগতভাবে আসার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএনপি এবং অন্যদের সভা-সমাবেশগুলোতে তাদের নীরব উপস্থিতি খুব একটা অজানা বিষয় নয়। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ২৮ তারিখের কর্মসূচি নিয়ে গোপনে আলোচনা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যদিও বিএনপি বেশ আগেই গোপনে জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করে রেখেছিল। সে ব্যাপারেও গণমাধ্যমে তখন কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। বিএনপি সেসবের প্রতিবাদ করেনি।
জামায়াত ছাড়াও খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও হেফাজতে ইসলামের একটি অংশ ২৮ তারিখের আগেই ঢাকায় তাদের দলীয় জনসভা করার কথা বলেছে। তবে এই আন্দোলনের শেষ পর্বে বিএনপির মূল ভরসা হবে জামায়াতসহ বিভিন্ন ইসলাম নামধারী রাজনৈতিক দল। কারণ জামায়াত একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল। তাদের ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর তাণ্ডব সবারই দেখা বিষয়। এবার তারা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করবে, তা ২৮ তারিখ থেকে বোঝা যেতে পারে। তবে যুগপৎ আন্দোলনে সরকার উৎখাত যদি সফল হয়, তাহলে বিএনপি একাই নয়, জামায়াত এবং ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
এত দিন বলা হয়েছিল, এই আন্দোলন গণতন্ত্র, দেশরক্ষা, জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদির জন্য করা হচ্ছে। তাই এই আন্দোলনের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ভাষায়, কেবল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রয়েছে। কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে তাদের ঐক্য হয়নি। বিএনপি নিজে দলগতভাবে কতটা অসাম্প্রদায়িক, তা নিয়ে রাজনীতিসচেতন মহলের মিলিয়ন প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে থাকা অতীত উগ্র বাম রাজনীতির কিছু নেতা আন্দোলনের সময় বিএনপিকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল বলে দেশি-বিদেশি মহলকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেকোনো নির্বাচন এলেই বিএনপির ভেতরের স্বরূপটি ঢেকে রাখা সম্ভব হয় না। ’৯১-এর নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত ভোট প্রদানে ভাগাভাগির কৌশল গোপনে নিয়েছিল। নির্বাচনের পরই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে। সেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির মূল শরিক ছিল, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনও করেছিল জামায়াতের সঙ্গে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ও বিএনপি জামায়াতের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এই নৈকট্য আদর্শেরও বটে। অন্যান্য ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল বিএনপিকেই তাদের আদর্শিক মিত্র বলে মনে করে। বাংলাদেশের রাজনীতির এই বাস্তবতা বিএনপির কিছু কিছু নেতা অস্বীকার করলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিএনপি বাংলাদেশকে কতটা ডান, ধর্মাশ্রয়ী, ভারতবিরোধী, সাম্প্রদায়িক এমনকি উগ্র সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালেই প্রমাণিত হয়েছে।
সুতরাং বর্তমান যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি শুরু থেকেই ধর্মাশ্রয়ী দলকে দূরে রাখার যে কৌশল নিয়েছিল, সেটি ছিল আন্দোলনের ছকের প্রথম স্তর। সেই স্তরে জামায়াতসহ ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে দূরে রাখা হয়। এটি দেশের অভ্যন্তরে বামসহ আওয়ামীবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে কাছে পাওয়ার সহজ হিসাব। আরও সহজ হিসাব হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বকে নিজেদের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ধারণা দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন লাভ করা।
পশ্চিমা বিশ্ব ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে নিজেদের বলয়ে রাখতে চায়। সেই বিবেচনার সমীকরণটি হয়তো এক মোহনায় যুক্ত হয়েছে। সে কারণেই পিটার হাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচন নিয়ে এত নজরদারি, এত দৌড়ঝাঁপ দেখতে পাওয়া যায়। বিএনপি ও মিত্র দলগুলো সেই ছক ব্যবহার করে ২৮ তারিখে ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে ‘মহাযাত্রার’ কী কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে, সেটি আগাম বোঝা সম্ভব নয়। তবে ২৮ তারিখের পর থেকে ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বিএনপি এবং এর সঙ্গে থাকা নামসর্বস্ব দলগুলো প্রতিদিনের কর্মসূচির ছক আঁকতে থাকবে। সেটি তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরেও হতে পারে।
অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি শান্তি ও উন্নয়নের নামে যে সমাবেশগুলো এ পর্যন্ত করে এসেছে, সেগুলো মূলত যুগপৎ আন্দোলনকারীদের রাস্তার আন্দোলনের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য করা হয়েছিল। সেদিক থেকে তারা অনেকের দৃষ্টিতেই সফল, অনেকেই আবার এটিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছেন।
২৮ তারিখ শনিবার সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি অফিস খোলা থাকে। ঢাকা শহরে গত কয়েক মাস শুক্র-শনিবারগুলোতে বিরোধীদের এবং সরকারি দলের সমাবেশের কারণে মানুষের চলাচলে বেশ বিঘ্ন ঘটেছিল। ২৮ তারিখ ঢাকা শহরে আদৌ মানুষ বাইরে যেতে পারবে কি না, তা নিয়েও অনেকের মধ্যে প্রশ্ন বা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, যুগপৎ আন্দোলনকারী এবং জামায়াতসহ ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও সেদিন মাঠে থাকবেন। এ নিয়ে প্রতিদিনই উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কথা বলার চেষ্টা করছে। বিএনপির মহাসচিব বলছেন, এবার তারা সফল হবেনই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সতর্ক করে বলে দিয়েছেন, শান্তি ভঙ্গ করা হলে তাঁরা চুপ করে থাকবেন না।
ঢাকায় বিরোধী দলের কয়েক লাখ নেতা-কর্মী সমবেত হলেই সরকার উৎখাত হয়ে যাবে—এমন ধারণার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব শর্তে তাদের মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেবে, তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। বিরোধী দল থেকে বলা হচ্ছে, তারা শান্তিপূর্ণ উপায়েই মহাসমাবেশ করবে। এত দিন বলা হয়েছিল, মহাসমাবেশ শেষে কর্মীরা যাঁর যাঁর বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু এখন বিভিন্ন গণমাধ্যম নানা ধরনের প্রতিবেদনে যেসব ধারণা দিচ্ছে, তাতে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিবেদনের শিরোনামই করেছে সরকারি দল ‘আক্রমণাত্মক’ থাকবে। পাশেই বিরোধী দল সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা থাকবে ‘সতর্ক’। আবার কোনো কোনো গণমাধ্যমে ঠিক বিপরীত কথাই বলা হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে না গণমাধ্যমগুলো কীভাবে এখানে নিশ্চিত হয়ে এ ধরনের আগাম বার্তা দিচ্ছে।
সরকারি দল আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করলে বিরোধীরা নিশ্চুপ থাকবে—এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং সরকারি দলকে বেশি শান্ত ও সতর্ক থাকতেই হবে। সরকারের রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাহিনীগুলোই আইন ও বিধিসম্মতভাবে ব্যবস্থা নেবে, সেটিই সবার কাম্য। এ ধরনের টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সরকার ও সরকারি দলকে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে—এমনটিই সচেতন মানুষ বিশ্বাস করে। যারা ভুল করবে, তাদের ঘাড়েই দোষ পড়বে। তখন প্রতিপক্ষকে দায়ী করে নিজেকে খুব বেশি সাধু দেখানো যাবে না। সেটি সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের জন্যই অভিন্ন। তবে বিরোধী দলের মাথায় ২৮ তারিখের পরই কর্মসূচির নানা ছক যেমন রয়েছে, সমর্থকদেরও নানা গোষ্ঠী রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এবারের এই আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এরই মধ্যে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেই বিতর্কে শক্তিধর কোনো কোনো রাষ্ট্র ছোটখাটো আকারে হলেও অংশ নিচ্ছে। আবার অনেক রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থেই নীরবে পর্যবেক্ষণ করছে।
একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যখন মাঠে নামার জন্য থাকার কথা, তখন সেদিকে কারও কোনো মনোযোগ নেই। এটা কি প্রকৃত সত্য নাকি এটাও আরেক ছক? নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে দেশে সব রাজনৈতিক দলই আন্দোলন করতে পারে। তখন সরকারের পতন ঘটানো হলে সেটিকে কেউ বাড়াবাড়ি বলতে পারে না। কারণ ঘোড়ার গাড়ির সম্মুখেই ঘোড়া থাকে, গাড়িকেই টেনে নেয়। এখন যা চলছে, তা ঘোড়ার আগে গাড়ি বসিয়ে দেওয়া। রাজনৈতিক কোনো আন্দোলনের ব্যাকরণেই এটিকে সমর্থন না করলেও যাদের ছক এঁকে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা রয়েছে, তারা সে পথেই হেঁটেছে, আরও হাঁটবে হয়তো। সুতরাং আওয়ামী লীগ, সরকার এবং ১৪ দল এসব রাজনৈতিক কৌশল, সমীকরণ, ছক ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়েই ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা তাদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫