Ajker Patrika

কৃষকের স্বপ্নে আবার হানা ঝড়-বৃষ্টির

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৬: ২২
কৃষকের স্বপ্নে আবার হানা ঝড়-বৃষ্টির

খেতের পাকা বোরো ধান নিয়ে এ বছর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের দুর্গতি কাটছেই না। ধান কাটা-মাড়াইয়ের মৌসুম শুরুর এক মাসের বেশি সময় পার হলেও শ্রমিক-সংকটে এখনো ৪০ শতাংশ কৃষক ঘরে ধান তুলতে পারেননি। দমকা হাওয়ায় নুয়ে পড়া ধানে চারা গজাচ্ছে। এর মধ্যেই গতকাল শনিবার ভোরে আবার দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে।

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসা এই বৃষ্টির কারণে কৃষকের আরও ক্ষতি হয়েছে। এত দিন যেসব কৃষকের ধান ভালো ছিল, সেগুলোও শনিবার নুয়ে পড়েছে। দ্রুত ধান কাটতে না পারলে আরও বেশি ধান অঙ্কুরিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। রাজশাহীর ৯ উপজেলার মধ্যে গোদাগাড়ী, তানোর, মোহনপুর, পবা ও বাগমারা উপজেলায় ধানের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শনিবার ভোর ৪টা ৫ মিনিট থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত রাজশাহীতে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। বৃষ্টি চলাকালে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯ কিলোমিটার। এই দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির পর সকালে গোদাগাড়ীর ললিতনগর, ভুষণা, আইড়া, টেটনাপাড়া ও তানোরের ডাঙ্গাপাড়া, কচুয়া কাজিপাড়া, পাঁঠাকাটা, কৃষ্ণপুর পশ্চিমপাড়া ও কালীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে এখনো অনেক ধান কাটা বাকি। সব ধানই নুইয়ে পড়ে আছে। ধান থেকে গাছ অঙ্কুরিত হয়েছে। হাতে গোনা দু-একটা জমির ধান ভালো দেখা গেছে।

ললিতনগর গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম সকালে নিজের খেত দেখতে গিয়েছিলেন। বললেন, ‘১৫ দিন আগেই আমার ধান কাটার সময় হয়ে গেছে। ধান কাটার লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যেই আজ আবার বৃষ্টি হলো।’

আইড়া গ্রামে রাস্তার পাশে চারজন শ্রমিক নিয়ে জমিতে ধান কাটছিলেন চাষি সোহেল রানা। তিনি জানান, এলাকায় ধান কাটা শ্রমিকের সংকট প্রকট। শ্রমিকেরা এখন শুধু বেছে বেছে ভালো ধানগুলো কাটছেন। যে ধান নুইয়ে পড়েছে, সেই ধানে ফলন কম। তাই ধানের বিনিময়ে সেসব ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ধানের বদলে নগদ টাকা দিতে চেয়ে ধান কাটাচ্ছেন। সারা দিনে একজন শ্রমিককে দিতে হবে ৬০০ টাকা।

শনিবার দমকা হাওয়া ও বৃষ্টির পর তানোরের কৃষ্ণপুর পশ্চিমপাড়ার মাঠে ধানখেত দেখতে যান কৃষক হোসেন আলী। তিনি জানালেন, অন্য মাঠে তাঁর তিন বিঘা ধান নুয়ে পড়েছে। কৃষ্ণপুর পশ্চিমপাড়ার দুই বিঘা ধান মোটামুটি ভালো ছিল। শনিবারের বৃষ্টিতে এই ধানগুলোও নুয়ে পড়েছে। তাঁর সব ধানই কাটার উপযোগী। শ্রমিক না পেয়ে কাটতে পারছেন না।

কালীগঞ্জ এলাকার চাষি জুলমত আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমির ধান কেটে বিঘাপ্রতি ১৫ মণ করে ফলন পেয়েছেন। এলাকায় এবার এক কৃষক সর্বোচ্চ ফলন পেয়েছেন ১৮ মণ। এর বেশি কেউ ফলন পেয়েছেন কি না তা শোনা যায়নি। জুলমত বলেন, ধান নুয়ে পড়ায় ঝরে গেছে। আবার যেসব ধানে গাছ বের হয়েছে, সেগুলো মাড়াইয়ের সময় পাতান হয়ে উড়ে যাচ্ছে। ফলে ধানের ফলন খুব কমে গেছে। এবার ধান চাষে কৃষকদের লোকসান।

তবে কৃষি বিভাগের হিসাবে রাজশাহীতে বোরো ধানের বিঘাপ্রতি গড় ফলন প্রায় ২০ মণ। কৃষি বিভাগ বলছে, গোদাগাড়ী, তানোর ও মোহনপুর উপজেলার দিকে ধানের ফলন একটু কম। আবার অন্য উপজেলাগুলোতে ধানের ক্ষতি হয়নি। সেখানে ২৫-২৬ মণ পর্যন্ত বিঘাপ্রতি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ফলে জেলায় বিঘাপ্রতি গড় ফলন হচ্ছে ২০ মণ করে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন এমনটিই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত মাঠের ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিক-সংকট কিছুটা থাকার কারণে দ্রুত ধান তুলতে পারছেন না চাষিরা। এর মধ্যেই শনিবার দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। তবে নিচু এলাকার ধান ইতিমধ্যে কাটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে ক্ষতি খুব একটা হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজকের পত্রিকাকে জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮৭ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন। ধানের গড় ফলন ভালো থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: ভারতীয় দুই কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত