আব্দুর রাজ্জাক
বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমাদের দেশে রিসোর্ট কালচার শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া, নবাবগঞ্জ এবং আশপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার হাজার হাজার বিঘা, হয়তো লাখ বিঘাও হতে পারে, গড়ে উঠছে রিসোর্ট।
রিসোর্টের ভেতরে গেলে দেখা যাবে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ, ফাইভ স্টার বা এর চেয়েও উঁচু মানের কটেজ। অত্যাধুনিক নন্দনশিল্পের আঁচড়ে গড়া সুন্দর সুন্দর বহু ভবন। পুকুর আছে, লেক আছে, দেশি-বিদেশি অর্কিড আছে। ছায়া সুনিবিড় মনোরম পরিবেশের জন্য বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গাছ আছে। যেসব গাছ ছায়া দেয় কিন্তু কোনো কৃষিপণ্য বা ফল দেয় না। এই সব হাজার বা লাখ বিঘা জমিতে কয়েক বছর আগেও কৃষি ফসল হতো অথবা মৎস্য চাষ হতো। এগুলো এখন ভরাট করে গড়ে উঠছে এমন সব রিসোর্ট।
এ তো বললাম ঢাকা বা এর আশপাশের কথা। এখন পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, বরিশাল, পিরোজপুর, যশোর, মাগুরা, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ হেন কোনো জায়গা নেই যে রিসোর্ট কালচার গড়ে ওঠেনি।
টাঙ্গাইল, জামালপুর, যমুনার ওই পারে বগুড়া, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ সব জায়গাতেই আছে শত শত রিসোর্ট। কক্সবাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ সব জেলা এই কালচারে ভরপুর। পাহাড়ি অঞ্চল সিলেট, ময়মনসিংহের কথা বাদই দিলাম।
একটু খোঁজ নিলে জানবেন, এসব রিসোর্টের মালিক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘুষখোর সরকারি চাকরিজীবী, অবৈধ পয়সা অর্জনকারী, অর্থাৎ ট্যাক্স-ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া অবৈধ টাকার মালিক অসাধু ব্যবসায়ীরা। কালোটাকার সাহায্যে গড়ে উঠেছে এই সব রিসোর্ট। হয়তো তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু সৎ ব্যবসায়ীও আছেন।
এই সব জায়গার মৌজামূল্য, অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন মূল্য আর বাস্তব মূল্যের অনেক তফাত। তাই রেজিস্ট্রেশন মূল্য যদি হয় ১০ হাজার টাকা, বাস্তব মূল্য হবে ৫০ হাজার টাকা। এখানে এই ৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স ফাঁকিবাজ আর ঘুষখোরেরা হালাল করেন। তারপর আলিশান ইমারত গড়ে তোলেন। যদি খরচ হয় ১০ কোটি টাকা, এখানে দেখানো হয় কয়েক লাখ টাকা। এসব কারণে রিসোর্ট কালচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের দেশের সর্বত্র। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন—আপনি আর কিছু না দেখেন, ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো লাইব্রেরি, ভালো গবেষণাগার, ভালো কোনো ক্রীড়া কমপ্লেক্স না থাকলেও ভালো ভালো দামি রিসোর্ট পাবেন।
সেখানে পাবেন বিশ্বের সব দামি ব্র্যান্ডের পানীয়। যদি একটু গোপনে ভালো করে যোগাযোগ করতে পারেন, সঙ্গে পাবেন আরও অনেক কিছু..., নাম উল্লেখ না করাই ভালো। এই সব রিসোর্টে ঢেউখেলানো পুকুর পাবেন, যেখানে খেলা করে বড় বড় হাঁস, মাঝে একান্তে ভেসে বেড়ায় কাচেঘেরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রচালিত নৌকা, কাচের ঘরের মধ্যে বসে আপনি বাইরের দৃশ্য উপভোগ করবেন, আপনাকে কেউ দেখতে পাবে না; অর্থাৎ মজাই মজা! মাঝে মাঝে সমুদ্রের ঢেউয়ের আদলে মৃদু দোলা পাবেন। যদি চান তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নৌকার মধ্যে একান্তে দুজনে রাত্রিযাপনসহ অনেক কিছুরই আনন্দ পাবেন।
এমন সব লোভ দেখিয়ে এভাবে যদি একের পর এক রিসোর্ট গড়ে উঠতে থাকে, তাহলে আমাদের আবাদি জমি ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। এ বছর দেখেছেন সবজির কী দাম ছিল! এর একমাত্র কারণ আমাদের সবজির চাষযোগ্য জমি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। পুকুর, নিম্নভূমি জলাশয়, কোনো কোনো জায়গায় খালও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কোনো উপায় থাকবে না। আর ওই সব রিসোর্টে আমাদের দেশের খুব কমসংখ্যক মানুষ সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ খাদ্যপণ্যের অপ্রতুলতার জন্য অপুষ্টিতে ভুগবে।
অধ্যাপক আবুল বারকাতের মতে, ৪৩ লাখ মানুষের হাতে মোট সম্পদের ৯২ শতাংশ পুঞ্জীভূত। এই ৪৩ লাখ মানুষ এই রিসোর্ট কালচারের সুফল ভোগ করবে। বাকি ১৭ কোটি মানুষ পুষ্টির অভাবে খাদ্যকষ্টে ভুগবে সারা জীবন। এই রিসোর্ট কালচার দিয়ে আমরা আরও একটা জিনিসকে উৎসাহিত করেছি না তো? এ ব্যাপারে সবাই একটু ভেবে দেখবেন—লোকচক্ষুর অন্তরালে দেহব্যবসা চলে কিছু রিসোর্টে। এই সংস্কৃতি আমাদের সমাজের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
তাই আসুন, আমরা এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসি, আইন করে কৃষিজমি, জলাশয় ব্যবহার করে আর রিসোর্ট কালচার করতে না দিই।রাষ্ট্রের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিলে জাতির জন্য মঙ্গল হবে।
লেখক: প্রকৌশলী
বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমাদের দেশে রিসোর্ট কালচার শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া, নবাবগঞ্জ এবং আশপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার হাজার হাজার বিঘা, হয়তো লাখ বিঘাও হতে পারে, গড়ে উঠছে রিসোর্ট।
রিসোর্টের ভেতরে গেলে দেখা যাবে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ, ফাইভ স্টার বা এর চেয়েও উঁচু মানের কটেজ। অত্যাধুনিক নন্দনশিল্পের আঁচড়ে গড়া সুন্দর সুন্দর বহু ভবন। পুকুর আছে, লেক আছে, দেশি-বিদেশি অর্কিড আছে। ছায়া সুনিবিড় মনোরম পরিবেশের জন্য বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গাছ আছে। যেসব গাছ ছায়া দেয় কিন্তু কোনো কৃষিপণ্য বা ফল দেয় না। এই সব হাজার বা লাখ বিঘা জমিতে কয়েক বছর আগেও কৃষি ফসল হতো অথবা মৎস্য চাষ হতো। এগুলো এখন ভরাট করে গড়ে উঠছে এমন সব রিসোর্ট।
এ তো বললাম ঢাকা বা এর আশপাশের কথা। এখন পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, বরিশাল, পিরোজপুর, যশোর, মাগুরা, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ হেন কোনো জায়গা নেই যে রিসোর্ট কালচার গড়ে ওঠেনি।
টাঙ্গাইল, জামালপুর, যমুনার ওই পারে বগুড়া, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ সব জায়গাতেই আছে শত শত রিসোর্ট। কক্সবাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ সব জেলা এই কালচারে ভরপুর। পাহাড়ি অঞ্চল সিলেট, ময়মনসিংহের কথা বাদই দিলাম।
একটু খোঁজ নিলে জানবেন, এসব রিসোর্টের মালিক বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘুষখোর সরকারি চাকরিজীবী, অবৈধ পয়সা অর্জনকারী, অর্থাৎ ট্যাক্স-ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া অবৈধ টাকার মালিক অসাধু ব্যবসায়ীরা। কালোটাকার সাহায্যে গড়ে উঠেছে এই সব রিসোর্ট। হয়তো তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু সৎ ব্যবসায়ীও আছেন।
এই সব জায়গার মৌজামূল্য, অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন মূল্য আর বাস্তব মূল্যের অনেক তফাত। তাই রেজিস্ট্রেশন মূল্য যদি হয় ১০ হাজার টাকা, বাস্তব মূল্য হবে ৫০ হাজার টাকা। এখানে এই ৪০ হাজার টাকা ট্যাক্স ফাঁকিবাজ আর ঘুষখোরেরা হালাল করেন। তারপর আলিশান ইমারত গড়ে তোলেন। যদি খরচ হয় ১০ কোটি টাকা, এখানে দেখানো হয় কয়েক লাখ টাকা। এসব কারণে রিসোর্ট কালচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের দেশের সর্বত্র। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন—আপনি আর কিছু না দেখেন, ভালো চিকিৎসাব্যবস্থা, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো লাইব্রেরি, ভালো গবেষণাগার, ভালো কোনো ক্রীড়া কমপ্লেক্স না থাকলেও ভালো ভালো দামি রিসোর্ট পাবেন।
সেখানে পাবেন বিশ্বের সব দামি ব্র্যান্ডের পানীয়। যদি একটু গোপনে ভালো করে যোগাযোগ করতে পারেন, সঙ্গে পাবেন আরও অনেক কিছু..., নাম উল্লেখ না করাই ভালো। এই সব রিসোর্টে ঢেউখেলানো পুকুর পাবেন, যেখানে খেলা করে বড় বড় হাঁস, মাঝে একান্তে ভেসে বেড়ায় কাচেঘেরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রচালিত নৌকা, কাচের ঘরের মধ্যে বসে আপনি বাইরের দৃশ্য উপভোগ করবেন, আপনাকে কেউ দেখতে পাবে না; অর্থাৎ মজাই মজা! মাঝে মাঝে সমুদ্রের ঢেউয়ের আদলে মৃদু দোলা পাবেন। যদি চান তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নৌকার মধ্যে একান্তে দুজনে রাত্রিযাপনসহ অনেক কিছুরই আনন্দ পাবেন।
এমন সব লোভ দেখিয়ে এভাবে যদি একের পর এক রিসোর্ট গড়ে উঠতে থাকে, তাহলে আমাদের আবাদি জমি ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। এ বছর দেখেছেন সবজির কী দাম ছিল! এর একমাত্র কারণ আমাদের সবজির চাষযোগ্য জমি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। পুকুর, নিম্নভূমি জলাশয়, কোনো কোনো জায়গায় খালও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কোনো উপায় থাকবে না। আর ওই সব রিসোর্টে আমাদের দেশের খুব কমসংখ্যক মানুষ সুবিধা ভোগ করবে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ খাদ্যপণ্যের অপ্রতুলতার জন্য অপুষ্টিতে ভুগবে।
অধ্যাপক আবুল বারকাতের মতে, ৪৩ লাখ মানুষের হাতে মোট সম্পদের ৯২ শতাংশ পুঞ্জীভূত। এই ৪৩ লাখ মানুষ এই রিসোর্ট কালচারের সুফল ভোগ করবে। বাকি ১৭ কোটি মানুষ পুষ্টির অভাবে খাদ্যকষ্টে ভুগবে সারা জীবন। এই রিসোর্ট কালচার দিয়ে আমরা আরও একটা জিনিসকে উৎসাহিত করেছি না তো? এ ব্যাপারে সবাই একটু ভেবে দেখবেন—লোকচক্ষুর অন্তরালে দেহব্যবসা চলে কিছু রিসোর্টে। এই সংস্কৃতি আমাদের সমাজের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
তাই আসুন, আমরা এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসি, আইন করে কৃষিজমি, জলাশয় ব্যবহার করে আর রিসোর্ট কালচার করতে না দিই।রাষ্ট্রের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিলে জাতির জন্য মঙ্গল হবে।
লেখক: প্রকৌশলী
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫