Ajker Patrika

ছলচাতুরীর পর

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭: ৩৩
ছলচাতুরীর পর

রংপুরের সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদী হাসান। এই পরিচয়ে একদিন দুই ব্যক্তি আসেন তিস্তার চরে। উদ্দেশ্য—সেখানে সোলার প্যানেল তৈরির কারখানা নির্মাণ করবেন। হ্যাঁ, এমনটাই তাঁরা বলেন স্থানীয় ব্যক্তিদের। কেউ কেউ তাঁদের প্রস্তাবে রাজিও হয়ে যান। তাঁদের শুধু ‘কোম্পানি’র কাছে নিজেদের জমি বিক্রি করতে হবে। কোন ‘কোম্পানি’, সেটা অবশ্য জানার জন্য তাঁরা মাথা ঘামাননি তখন। তাঁরা আমমোক্তারনামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির নামে স্বাক্ষর দিয়ে দেন সফিয়ার ও মেহেদীকে। এরপর তাঁদের অজান্তে সফিয়ার ও মেহেদী জাল দলিল তৈরি করে লিখে নেন চরের ১ হাজার ৩৯ একর জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা!

এটি কোনো সিনেমার গল্প নয়। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর ডিমলার তিস্তার চরে। সেখানে বাস করে প্রায় দুই হাজার পরিবার। সবাই এখন জমি হারিয়ে নিঃস্ব। পুরো তিস্তার চরের জমির মালিক এখন সফিয়ার ও মেহেদী। শুধু কৃষিজমি নয়, অনেকের বাড়ির নতুন মালিকও তাঁরা।

তিস্তার চরের জমি বেহাত হওয়ার এই ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছুদিন আগে। জুনের ২২ তারিখ রাতে সফিয়ার ও মেহেদী তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০-১২ জনের স্বাক্ষর নিয়েছেন। মোট ২৭ জনের মধ্যে বাকিদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। যাঁদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে, তাঁরা নিজেরাই জানেন না জমি বেচাকেনার কথা। জমির প্রকৃত মালিকেরা প্রতারণার ব্যাপারটি জানতে পারেন আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। এরপর তাঁরা উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগের কপি পাননি, পেলেই ব্যবস্থা নেবেন।

শুধু সফিয়ার ও মেহেদীর পক্ষে তো এ কাজ করা সম্ভব নয়, নিশ্চয়ই তাঁদের সহযোগিতা করেছেন ডিমলার সাবরেজিস্ট্রার মনিষা রায় এবং দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী; এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ভূমি অফিস ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, দলিল লেখক মতিউর রহমান চৌধুরীর সম্পাদনায় পাঁচটি দলিলের মাধ্যমে জমি হস্তান্তর হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিদের আরও একটি অভিযোগ—ডিমলা উপজেলায় জাল দলিলের একটি চক্র সৃষ্টি হয়েছে। এর আগেও অনেকে এই চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। তাহলে কেন চরবাসী একটু সতর্ক থাকলেন না? খালি কাগজে স্বাক্ষর না করা আর দলিল পড়ে স্বাক্ষর করার সতর্কবাণী কিন্তু পুরোনো।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কেউই দায় স্বীকার করেননি। তাঁরা কি নিজেদের খুব ক্ষমতাধর ভাবছেন? আর এমনটা হলেই কি যে কারও সঙ্গে জুলুম বা প্রতারণা করা যায়? আশা করি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ছলচাতুরী করা প্রতারকেরা ধরা পড়বে। তবে হয়রানির শিকার হয়ে স্থানীয়দের পিছিয়ে গেলে চলবে না, সতর্ক থাকতে হবে তাঁদেরও। এক জোট হয়ে সমবেত প্রতিবাদই পারে ছলচাতুরীর মতো যেকোনো অপরাধকে সমূলে উপড়ে ফেলতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অপরাধ দমনে উদ্যোগী হতে হবে। প্রশাসনের কাছে এই প্রত্যাশা কি অন্যায্য?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় এক দিনে ১০০ ডলার কমল সোনার দাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত