Ajker Patrika

ধান চিটা, কৃষকের মুখ মলিন

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৩৩
ধান চিটা, কৃষকের মুখ মলিন

আমন খেত ঘিরে এবার মনে ভীষণ আনন্দ ছিল তারাগঞ্জের মেনানগর গ্রামের আশরাফুল ইসলামের। কারণ এবার বন্যা কম হওয়ায় তাঁর আমন ধান ডুবে যায়নি। সেই খেতের গাছ থেকে ধানের শিষ বেরিয়েছে। শিষের অধিকাংশ ধান চিটা হওয়ায় তাঁর হাসিমুখ মলিন হয়ে গেছে।

আশরাফুল ইসলাম আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এইবার হলফলা ধান খেত দেখি মনোত খুব আনন্দ আছলো। ভাবছুনু ভালোই ধান হইবে। ধান বেচে লাভের টাকা দিয়া ধার দেনা শোধ করিম। কিন্তু তাক কোনটে হওচে। ধানের খেতোত শিষ বেরার পর দেখছো আধেক (অর্ধেক) ধান পাতান (চিটা) হয়া গেইচে। এবার মনে হয় আবাদের টাকায় উঠার নেয়।’

এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উর্মি তাবাসসুম বলেন, তাপমাত্রার তারতম্য এবং ঝোড়ো বাতাসের কারণে ধানের গাছ থেকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ফুলের অঙ্গ গঠনে বাধা পায়। এ ছাড়া পরাগায়ন ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ কারণে ধানের থোড় বা শিষের রং বদলে গিয়ে চিটায় পরিণত হয়। প্রচণ্ড তাপদাহের পর গত ১৯ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে ধানের ফুল পর্যায়ে পরাগায়ন হয়নি। ফলে কিছু কিছু খেতের ধানের শিষের ধান চিটা হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার কারণেও ধান চিটা হয়ে থাকে। কৃষকদের ব্যাকটেরিয়া নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

গত শুক্রবার উপজেলার ইকরচালী, হাড়িয়ারকুঠি, সয়ার, আলমপুর ও কুর্শার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ধান খেতে সবেমাত্র শিষ বের হয়েছে। কিন্তু খেত সাদা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। শুকিয়ে গেছে অনেক আমন খেতের শিষ।

বাটুপাড়া গ্রামের গোলজার হোসেন (৬৫) সয়ার পশ্চিম মাঠে এক একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। খেতের অধিকাংশ শিষের ধান চিটা হয়ে গেছে। ওই মাঠে গোলজার হোসেন বলেন, ‘এমনি আমন ধানের ফলন কম, তাঁর ওপর ধান চিটা হয়া গেইছে। কয়েকবার কীটনাশক দিয়াও কোনো কাম হওচে না। এবার হামার মরণ দশা।’

ওই মাঠে কথা হয় মমিজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে ৪০ শতক জমিত গুটি স্বর্ণা জাতের ধান লাগিয়েছিলাম। ১৫ দিন আগে বৃষ্টির পর খেতে অর্ধেক ধান চিটা হয়ে গেছে। এখন কী করমো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। খেত জুড়ে ধান মরে সাদা ও হলুদ হয়ে গেছে। শিষে থাকা ধান চিটা হয়ে গেছে।’

দোলাপাড়ার মাঠে মেনানগর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘খেতের অর্ধেক ধান শুকি গেইছে। খড় ছাড়া কিছু নাই। ধান না হইলে খামো কি?

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক নজরুল মিয়া (৫০) এবার তিনি ৪০ শতক জমিতে আমন লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কৃষাণের পোড়া কপাল। কত কষ্ট করি ধান কোনা আবাদ করনু। তাক পাতান হয়া গেল। জমির মালিকোক কি দেইম, মুই কি নেই। খরচের টাকায় উঠবে না। ধান টিপি দেখ চাল নাই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। প্রচণ্ড রোদের পর হঠাৎ ধান বের হওয়ার সময় বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকের আমন ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়বেন চাষিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত