Ajker Patrika

মেগাসিটি

সম্পাদকীয়
মেগাসিটি

সম্প্রতি রাজধানীর বাংলামোটরের বিআইপি মিলনায়তনে মেগাসিটি-বিষয়ক একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে মেগাসিটি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, ‘আমি যদি জানালা খুলে গাছ দেখতে না পাই, পাখির ডাক শুনতে না পাই, রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ওঠে, সেটা যদি বুঝতে না পারি, তাহলে তো হবে না। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।’

মেগাসিটির উত্থানে পরিকল্পনার অভাব থাকলে আমাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলা হয়েছে এখানে। ভয়াবহ সত্য হলো, মেগাসিটি গড়তে গিয়ে যদি পরিবেশ রক্ষার কথা না ভাবি, তাহলে একটি কংক্রিটের জঞ্জালের মধ্যে গড়ে উঠবে যান্ত্রিক মনুষ্যজীবন। এই জীবন থাকবে প্রকৃতির ছোঁয়া থেকে শত যোজন দূরে। মূলত নতুন যে মেগাসিটিগুলো পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে উঠেছে, তার সবই এই সমস্যায় ভুগছে। ঢাকা মেগাসিটিও পড়েছে এই সংকটে।

ন্যূনতম ১ কোটি মানুষের বসবাস রয়েছে যে শহরে, সেই শহরগুলোকেই মেগাসিটি বা অতিমহানগরী বলা হয়। বিশ্বের ৩৪টি মেগাসিটির ২১টিরই অবস্থান এশিয়ায়। প্রতিটি মেগাসিটিই স্বকীয়ভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পনাগুলো করা হয়েছে নিজ ভৌগোলিক পরিবেশের কথা মনে রেখে। কিন্তু শঙ্কার ব্যাপার হলো, সর্বক্ষেত্রে এই পরিকল্পনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি এবং কখনো কখনো পরিকল্পনা ছাড়াই বেড়ে উঠেছে মেগা শহর। আমাদের ঢাকা মহানগরের দিকে তাকালে যে কেউ বলে দিতে পারবে, এই মহানগরী তৈরিতে কোনো পরিকল্পনার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা হয়নি। মূলত অর্থনৈতিক কারণে শহর ও গ্রামের পার্থক্য ঘুচে যাচ্ছে এবং গ্রামে টিকে থাকার সংগ্রাম কঠিন ও ক্লান্তিকর হওয়ায় মরিয়া মানুষ চলে আসছে মেগা শহরে। ঢাকা শহরেই মূলত দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। তাই পরিকল্পিতভাবে বিকেন্দ্রীকরণ না হলে জনসাধারণের এই মেগাসিটিতে আসার প্রবণতা কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ঢাকার বহু এলাকায় বস্তির সৃষ্টি হয়েছে এবং তা আরও হতে থাকবে। নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে কায়ক্লেশেই বয়ে যাবে তাদের জীবন। ওপরের দিকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে থাকবে শহর। চোখ আকাশ খুঁজবে, কিন্তু খুঁজে পাবে না। পাখিরা বসতবাড়ি তৈরি করতে না পেরে ছেড়ে যাবে শহরটা।

ঢাকা শহরকে কংক্রিটের জঞ্জাল না বানিয়ে পরিকল্পিত অতিমহানগরীতে কীভাবে পরিণত করা যায়, তা নিয়ে ভাবা এখন যেকোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চেয়েও অনেক জরুরি, সে কথা কি সরকার বুঝতে পারছে? এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এবং সে জন্য দেশের সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঢাকাকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে। বনাঞ্চল রক্ষা হবে কি না, স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকবে কি না, ফুটপাত চলাচলের উপযোগী থাকবে কি না, অক্সিজেনের চলাচল অবিঘ্নিত থাকবে কি না, পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পর্যাপ্ততা থাকবে কি না—এগুলো হলো মেগাসিটিকে বাঁচানোর খুব সাধারণ কয়েকটি প্রশ্ন। আরও গভীর প্রশ্ন যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়েও অচিরেই জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর, আবারও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড

সাদাপাথর লুট: ৫১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত