Ajker Patrika

রসের গ্রাম জগদীশপুর

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
রসের গ্রাম জগদীশপুর

বাবা-মায়ের ৯ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মদন মোহন। বাবা নগেন্দ্রনাথ ছিলেন সাধু-সন্ন্যাসীর মতো মানুষ। সংসারের খোঁজখবর রাখতেন না তেমন। গ্রামে সামান্য আবাদি জমি থাকায় মা সুমতী বালা সেই জমি চাষ করে ৯ সন্তান নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাতেন। ১৯৮১ সালে রংপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েও সংসারে অভাবের কারণে পড়ালেখা হয়নি মদন মোহনের। মায়ের সঙ্গে সংসারযুদ্ধে নেমে পড়তে হয় তাঁকে।

তবে মদন মোহন স্কুলজীবন থেকেই ছিলেন খেজুরগাছপ্রেমিক! স্কুলে যাওয়া-আসার পথেই হোক আর অন্য কোথাও গেলে হোক, খেজুরগাছের চারা দেখলে তুলে এনে পুকুরের ধারে রোপণ করতেন। সেসব চারাগাছ ধীরে ধীরে বড় হয়ে যায়। একসময় এসব গাছ দেখে তিনি খেজুরের বাগান করবেন বলে ভাবতে থাকেন। শুরু করেন নিজ উদ্যোগে খেজুরের চারা উৎপাদন। তাঁর নিজস্ব ৭০ শতাংশ জমিতে নিজের উৎপাদন করা খেজুরের চারা রোপণ করেন। ২০ বছর পর ফল না দিলেও তিনি এখন খেজুরগাছগুলো থেকে রস বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। এখন তাঁর খেজুরবাগানে ১৫০টির বেশি খেজুরগাছ রয়েছে। মদন মোহনের বাড়ি রংপুর সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জগদীশপুর গ্রামে।

কুয়াশার চাদরে মোড়ানো গ্রামে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে খেজুরগাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে প্লাস্টিকের বোতল। তাতে গাছ থেকে নিংড়ে পড়ছে রস। পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে বোতল ও গাছের শরীর জাল দিয়ে ভালো করে মোড়ানো রয়েছে। মদন মোহন তাঁর খেজুরগাছ থেকে রস পেড়ে আনছেন বাগানে অপেক্ষমাণ মানুষের জন্য।

অপেক্ষমাণ মানুষের মধ্যে উনিশ বছর বয়সী কলেজছাত্র রিফাতও একজন। শীত উপেক্ষা করে সেই ভোরবেলা বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন খেজুরের রস খেতে। এবারই প্রথম। চোখাচোখি হয় তাঁর সঙ্গে। নিজের উচ্ছ্বাস লুকাতে পারেন না রিফাত।  

বেশ কিছুক্ষণ পর রসভর্তি প্লাস্টিকের বোতল হাতে গাছ থেকে নেমে এলে কথা হয় মদন মোহনের সঙ্গে। প্রায় ৪০ বছর আগে স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে কুড়িয়ে আনা খেজুরের চারাগুলো যে সবই প্রায় বেঁচে যাবে, সেটা ভাবেননি তিনি। যখন ধীরে ধীরে চারাগুলো বড় হতে শুরু করে, তখন তিনি বাগানের পরিসর বাড়ানোর চিন্তা করেন। এখন তাঁর বাগানে ১৫০টির বেশি খেজুরগাছ আছে। এই গাছগুলো ২০ বছরের কাছাকাছি সময়ে রস দিচ্ছে। সেই রস বিক্রি করে এখন মদন মোহন ছয় মাসে আয় করেন প্রায় ৪ লাখ টাকা। এ উৎপাদনে তাঁর বাড়তি কোনো ব্যয় নেই।

বাড়িতে প্রতিদিন অনেক লোক রস খেতে আসে, বিষয়টি তাঁর কাছে আনন্দের। মদন মোহন বললেন, ‘রসের জন্য লোকজন আমাকে ফোন দিয়ে বলে, “রসমোহন কাকু বলছেন”। আমি বলি, “জি, আমি রসমোহন কাকু”। বিষয়টি খুব ভালো লাগে আমার কাছে। রসের কারণে এখন আমার গ্রামটাকে রসের গ্রাম জগদীশপুর বলে অনেকে। এমনকি আমাকে এখন মানুষ রসমোহন বলে চেনে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘বিচারপতি খায়রুলকে হাতকড়া পরানো মানে পুরো বিচার বিভাগকে হাতকড়া পরানো’

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা করলে আমাকে জানাবে—ছাত্রীকে খুবি অধ্যাপক

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু: গভর্নর

মৌচাকে হাসপাতালের পার্কিংয়ে প্রাইভেট কার থেকে উদ্ধার দুই মরদেহের পরিচয় মিলেছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত