Ajker Patrika

ভরা মৌসুমেও সাগরে মিলছে না ইলিশ

পাথরঘাটা (বরগুনা) ও মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২২, ১২: ৪৩
ভরা মৌসুমেও সাগরে মিলছে না ইলিশ

নিষেধাজ্ঞার কারণে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ২৩ জুলাই সে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে জাল নিয়ে সাগরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ছুটে যান জেলেরা। আশা ছিল, ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে। শুরুর কয়েক দিন হয়েছিলও তাই। কিন্তু এবার সাগর যেন কৃপণ হতে শুরু করেছে । ভরা মৌসুমেও সাগরে জাল ফেলে ইলিশের দেখা মিলছে না।

কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা না পড়ায় বরগুনার পাথরঘাটায় প্রায় ২২ হাজার পরিবার হতাশার মধ্যে দিন পার করছে। একই চিত্র চট্টগ্রামের মিরসরাইয়েও। চরম অভাব-অনটনে আছেন মিরসরাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ শতাধিক জেলে পরিবারের প্রায় ১০ হাজার সদস্য ।

গতকাল রোববার দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। এসব ট্রলারে মাছ নেই বললেই চলে। মাছ ধরা না পড়ায় এখনো প্রাণ ফেরেনি বন্দরটিতে। বেকার বসে আছেন শ্রমিকেরা, অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরাও। দুই-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁক-ডাক। এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরণকেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনাবেচা নেই এখানে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গ সাগরে ইলিশের খোঁজ না মিললেও পূর্ব দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে কিছু ইলিশের দেখা মিলছে। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলেরা সেদিক থেকে মাছ শিকার করলেও ডাকাতির কবলে পড়ে সব খোয়াচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এখানকার জেলেরা।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নদী ও সমুদ্রে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। ভারতের জেলেদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এখনো ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারতে একই সময়ে অবরোধ না দিলে আমাদের জেলেরা ইলিশে মার খেতেই থাকবে। দেশি জেলেদের রক্ষা করতে এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার (অপু) জানান, নিষেধাজ্ঞার পর ৩-৪ দিন ইলিশ ধরা পড়লেও হঠাৎ ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। কেন ইলিশ ধরা পড়ছে না তা বলা যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ও সমুদ্রে ইলিশের পরিমাণ বাড়তে পারে। আগস্টের মাঝামাঝি সময় নদীতে ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হবে। তখন নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে।

এদিকে গত শনিবার বিকেল ৩টায় মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী ইউনিয়নের স্লুইসগেট ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০টি মাছ ধরার বোট জেলেদের নিয়ে সাগর থেকে মাছ ধরে এসে নৌকাগুলো নোঙর করেছে। ইলিশের ভরা মৌসুমেও সাগর থেকে খালি হাতে ফিরে আসায় জেলেদের চোখে মুখে বিষণ্নতার ছাপ দেখা গেছে সেখানে। কথা বলতেও তাঁদের আগ্রহ নেই।

এ সময় দেখা যায় দুর-দুরান্ত থেকে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছেন সাগরের তাজা ইলিশের আশায়। সবাই মাছের জন্য হুমড়ি খাচ্ছেন। কিন্তু মাছ নেই! এক একটি নৌকা থেকে কয়েক মন করে মাছ নামার কথা, কিন্তু তার বিপরীতে ৩-৫ কেজি করে মাছ নামছে। জেলেদের চোখে মুখে যেন রাজ্যের অন্ধকার। খালি হাতে ফিরে গেছেন সব ক্রেতা। শাহেরখালী, ডোমখালী ঘাটের এখনকার চিত্র এমন।

সাগর থেকে ফেরা শুকদেব জলদাশ ও সুধন জলদাশ বলেন, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এই সময়ে ভারতের জেলেরা সব মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আমাদের জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেন না পারে, কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক পাহারায় ছিল। ৬৫ দিন ধরে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। সরকারিভাবে ৫০ কেজি চাল দিয়েছে, ৫০ কেজি চাল দিয়ে কি সংসার চলে? তেল, লবণ, শুকনো বাজার, কাচা বাজার ছাড়া কি সংসার চলে? ইলিশের মৌসুমের শুরুতে নৌকা, জাল কেনা এবং মেরামতের জন্য ধার-দেনাসহ অনেক ঋণ হয়ে গেছে আমাদের। নিষেধাজ্ঞার সময়েও এনজিওরা ঋণ মাফ করেনি। আশা ছিল নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগর থেকে ইলিশ ধরে চার-পাঁচ মাসে ঋণ পরিশোধ করব। কিন্তু মাছ না পাওয়ায় কীভাবে কি করব বুঝতেছি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত