Ajker Patrika

ভাসমান ইফতারিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৪
ভাসমান ইফতারিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি

ময়মনসিংহে মাহে রমজানে বেড়েছে ভাসমান ইফতারি বিক্রেতা। তাঁরা খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকেরা বলছেন, সারা দিন রোজা রেখে বাইরের খোলা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি করা খাবার খেয়ে নানা রোগবালাইয়ে ভোগার ঝুঁকি রয়েছে। এসব রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার দুই বছরে নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে। এ জন্য তাঁদের অনেকে ভাসমান দোকান বসিয়ে বিক্রি করছেন ইফতারসামগ্রী। এ পেশায় নতুন এসে অনেকে লাভের চিন্তা করছেন। প্রতিদিন তৈরি করা ইফতারসামগ্রী বিক্রি না হলেও পরদিন বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার পাশে চেয়ার, টেবিল নিয়ে ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে তাঁরা বিক্রি করছেন। এতে রাস্তার ধুলাবালু ইফতারসামগ্রীতে পড়ছে। মানুষ এসব কিনছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বার আলী মোড়ের ইফতার বিক্রেতা মো. হাদিম আলী বলেন, সারা বছর তাঁরা খাবার হোটেল পরিচালনা করেন। রোজায় ইফতারি বিক্রি করেন। দৈনিক তিন থেকে চার হাজার টাকার ইফতারি বিক্রি করেন তিনি। তাঁর কর্মী রয়েছেন ১৩ জন। রোজার কয়েক দিন আগে নোংরা পরিবেশের জন্য দুবার ভ্রাম্যমাণ আদালত আট হাজার টাকা জরিমানা করেছেন তাঁকে।

ভাই ভাই হোটেলের মালিক কাজল ঘোষ স্বামী বলেন, ‘ব্যবসা কমে গেছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২২ থেকে ২৩ বছর ধরে খোলামেলা পরিবেশে ইফতারি বিক্রি করছি। এতে কোনো দিন সমস্যা হয়নি।’

ইফতারি কিনতে আসা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় আমি আপাতত একা থাকছি। তাই রোজা রেখে প্রতিদিন বাইরে থেকে ইফতার কিনতে হচ্ছে। আজকের তৈরি করা না আরও দুই দিন আগের ইফতার কিনলাম, তা বোঝার উপায় নেই। তা ছাড়া রাস্তার ধুলাবালি তো ইফতারসামগ্রীর মধ্যে পড়ছেই।’

সাইদুর রহিম বলেন, ‘রোজার প্রথম দিনের ছাড়া অন্যান্য দিনের ইফতার কিনতে সংকোচ লাগে। কারণ প্রতিদিন বিক্রি শেষে অতিরিক্ত যেগুলো থেকে যায়, সেগুলো তো বিক্রেতারা আর ফেলে দেয় না। আমরা দেখেছি, অনেক নোংরা পরিবেশেও ইফতারসামগ্রী তৈরি করতে। এদিকে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে জেলা জন-উদ্যোগের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা উৎসব ঘিরে বাড়তি আয়ের চিন্তা করে। রোজার মধ্যে দেখা যায় ভাসমান ইফতারি বিক্রেতাদের। তবে তাঁদের কোনোভাবে নিরুৎসাহিত করতে চাই না। তাঁরা যেভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতারি বিক্রি করেন, সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে শুক্র শনিবার বাদে সব দিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ অভিযান হোটেল রেস্তোরাঁয় করা হয়। এসব জায়গায় যারা ইফতারসামগ্রী বিক্রি করেন, তাঁদের সহজে ধরা যায়। এখন অনেক ভাসমান ইফতারি বিক্রেতা রয়েছেন, তাঁদের শনাক্ত করা আমাদের জন্য কঠিন। বাসা থেকে ইফতারি তৈরি করে রাস্তার পাশে বিক্রি করেন। তবে আমরা জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করব।’

ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়ার পাশাপাশি রোগ-বালাই বাড়ছে। রোজায় বাইরে তৈরি করা খাবার কম খাওয়াই ভালো। অনেক সময় দেখা যায়, ভাসমান ইফতারির মধ্যে বাসি খাবারও থাকে। এ খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত