Ajker Patrika

বিদ্যালয় ভাঙচুর

সম্পাদকীয়
বিদ্যালয় ভাঙচুর

কলহ জমি নিয়ে আর তার শিকার স্কুলঘর। জমি নিয়ে বিরোধ হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে স্কুলে হামলা! তার মানে, শিক্ষা উঠেছে মাথায়! আজকের পত্রিকায় ২৩ সেপ্টেম্বর ‘জমির বিরোধে গভীর রাতে বিদ্যালয়ের ১২ কক্ষ ভাঙচুর’  শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদরের পালেরহাট বাজারের পালেরহাট আইডিয়াল একাডেমির জমি নিয়ে এই বিবাদ। তোফায়েল আহমদ গংয়ের সঙ্গে বিরোধ চলছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ কামালের।

আদালতের রায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তোফায়েল আহমদের লোকেরা স্কুল আক্রমণের জন্য বেছে নেয় বৃহস্পতিবার রাতটিকে। জমি দখল করা যাবে কি যাবে না, সেটা নিয়ে আর কে ভাববে, তবে এই জমির ওপর নির্মিত স্কুলে তো দুই দফা আক্রমণ করা যাবে! ব্যস, সে কথা মাথায় রেখেই বুঝি মহা উৎসাহে স্কুলের ১২টি কক্ষে চলল ভাঙচুর।

প্রধান শিক্ষক এবং তোফায়েল সাহেব আত্মীয়। জমিটি প্রধান শিক্ষক মোরশেদ কামালের মায়ের। কিন্তু তোফায়েল গংয়ের দাবি, এই জমি তাদের। তাই জমি নিয়ে এই দ্বন্দ্ব।

আমাদের দেশে ভিলেজ পলিটিকসের একটা বড় বিষয়ই হলো জমিসংক্রান্ত মামলা। একসময় জমি নিয়ে ‘কাইজ্যা’ করতে যেত মানুষ।কবি জসীমউদ্‌দীনের কাব্যে রূপাইকে নিয়ে সে রকম একটি কাহিনির দেখা পাই আমরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের অনাচার কমে যাওয়ার কথা।

কিন্তু এই ইতিবাচক পরিবর্তনটি ঘটতে হলে সমাজে যে শিষ্টাচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার, তা তো নিশ্চিত করতে হবে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের গ্রাম থেকে ভিলেজ পলিটিকস দূর হচ্ছে না। বরং নানা বেশে তা গ্রামের পরিবেশকে দূষিত করে চলেছে। বিদ্যালয়ের ঘরের আসবাব ভাঙচুর তারই একটি নমুনা।

জমিটি কার, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। কিন্তু তাতে স্কুলের আসবাবের কী দোষ, সেটাই মাথায় আসে না। ভয়ের কথা হলো, বার্ষিক পরীক্ষা সন্নিকটে। কীভাবে স্কুলের ২৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে? তাদের তো চেয়ার-টেবিল ‘নেই’ হয়ে গেছে।

একসময় বাংলাদেশে ‘সখি তুমি কার’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল। সে রকম করে ‘জমি তুমি কার’ নামে আরেকটি সিনেমা হলে মন্দ হয় না। সমাজের আচার-আচরণ তো দিন দিন সিনেমার মতোই হয়ে যাচ্ছে। কোনো ধরনের বাছ-বিচার ছাড়াই যা ইচ্ছা তা করা যাচ্ছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না, কেউ কাউকে সম্মান করছে না। রুচিবোধ, সম্মানবোধ বিদায় নিয়েছে, থেকে গেছে শুধু পশুশক্তি।

স্থিতাবস্থা রয়েছে যে জমির, সেই জমির বিষয়ে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিক। কিন্তু অযথা স্কুলের সম্পত্তি বিনাশের জন্য যারা আক্রমণ করেছে, সেই আক্রমণকারীদের শাস্তি তো হতে হবে। তদন্ত করে নাটের গুরুকে খুঁজে বের করা হোক। যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবেও বয়কট করা যায় কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। স্কুল ধ্বংস করার অর্থ শিক্ষাকে আঘাত করা—এ কথা এই অবুঝদের কে বোঝাবে? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের খোঁজ মিলছে না

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতন নির্ধারণে কমিটি

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

৫ দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থায়ন নিয়ে শঙ্কা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত