Ajker Patrika

বুক খাঁখাঁ করছে তাঁদের

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
বুক খাঁখাঁ করছে তাঁদের

শনিবার রাত তখন ৯টা ২০ মিনিট। দিনের কর্মক্লান্তি সেরে ব্যারাকে বিশ্রামে ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আবার কেউ কেউ মেতে উঠেছিলেন খোশগল্পে।

ক সেই মুহূর্তে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নম্বরে একটি ফোন আসে। মোবাইল ফোন রিসিভ করতেই ওপ্রান্ত থেকে একজন সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লেগেছে জানিয়ে দ্রুত যেতে বলেন। খবরটি পাওয়ার পর রাত ঠিক সাড়ে ৯টায় স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ, লিডার মিঠু দেওয়ানসহ ১৫ জন আগুন নেভাতে দ্রুত বের হয়ে যান।

এ সময় ফায়ার ফাইটার রিয়াদসহ যে কয়জন স্টেশনে ছিলেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের চলে যেতে দেখেন। কিন্তু সেই যাত্রা যে শেষ যাত্রা হবে, তা কখনো কল্পনাও করেননি তাঁরা। সত্য যে কখনো কখনো কল্পনাকেও হার মানায়। ঠিক তা-ই হয়েছিল কুমিরা স্টেশনের কর্মীদের ক্ষেত্রে। ১৫ জন আগুন নেভাতে গেলেও সেখানে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে তাঁদের মধ্যে ৭ জন মারা যান। অন্যদের মধ্যে আরও ৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একজনের হদিস এখনো মেলেনি।

এদিকে সহকর্মীদের এমন বিদায় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ওই স্টেশনে থাকা অন্য সহকর্মীরা।

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে কথা হয় একাধিক কর্মীর সঙ্গে। তাঁদেরই একজন ফায়ার ফাইটার রিয়াদ (২৩)। কথা বলতেই অশ্রু ঝরতে থাকে তাঁর।

ফায়ার ফাইটার রিয়াদ জানান, নিজ সহকর্মীদের এভাবে বিদায় জানাতে হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি। ঘটনার পর থেকে আর ব্যারাকে ফিরে যেতে মন চাইছে না তাঁর।

সহকর্মীদের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঠিকমতো ঘুমাতে ও খেতে পারছেন না। বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে। চারদিকে যেন তাঁদের ডাক শুনতে পান।

একই অবস্থা এই স্টেশনে থাকা অন্য কর্মী লিডার আতিকুর রহমান, তানজিদ মিয়াসহ অন্যদেরও। তানজিদ বলেন, ‘কোথাও অগ্নিকাণ্ডের খবর পেলে আগুন নেভাতে আমিও প্রায় সময় যাই। সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে গিয়ে আহত হই। সেদিন আমি বিশ্রামে ছিলাম। আমাকে রেখে ১৫ জনের ওই দল বিএম কনটেইনার ডিপোতে যায়। কখনো কল্পনা করিনি এমন একটি দুঃসংবাদ আসবে। ভয়াবহ এ ঘটনা শোনার পর থেকে আমরা কেউ স্বাভাবিক আর হতে পারছি না।’  

সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বেঁচে ফেরা ফায়ার ফাইটার রাকিব হাসান বাপ্পী বলেন, ‘গত শনিবার রাতে ফায়ার স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ স্যারের নেতৃত্বে আমরা ১৫ জন কর্মী যন্ত্রপাতি নিয়ে বিএম ডিপোতে আগুন নেভাতে যাই। টানা ৪০ মিনিট আগুন নেভানোর কাজ করছিলাম। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বাইরে বসানো পানির পাম্পের প্রেশার বাড়াতে যাই। পাম্পের প্রেশার বাড়াতে ঘটনাস্থল থেকে বাইরে সরে আসার এক মিনিটের মধ্যেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।

বিস্ফোরণে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মুহূর্তেই ছিটকে মাটিতে পড়ে যাই।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুঃসাহসিকতার সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজ করেন। বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডেও সেভাবেই কাজ করছিলেন। কিন্তু ভয়াবহ বিস্ফোরণে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সাতজন, সীতাকুণ্ড স্টেশনের দুজন কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ক্ষতি অপূরণীয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত