Ajker Patrika

যেভাবে ধর্মপালন সহজ করে ইসলাম

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
যেভাবে ধর্মপালন সহজ করে ইসলাম

ইসলাম ধর্ম নানাবিধ বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। এসবের অন্যতম হলো বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে সহজ করা। সবার জন্য উপযোগী ও উপকারী করেই ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে। এটি ভারসাম্যপূর্ণ, সহজ-সরল ও স্বভাবজাত ধর্ম, যেখানে কঠোরতা, উগ্রতা ও সীমালঙ্ঘন উপেক্ষিত; যেখানে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির অবকাশ 
নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ, তা চান আর যা তোমাদের জন্য কষ্টকর, তা চান না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)

মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই দীন সহজ। তোমাদের কেউ যেন দীনকে কঠিন করে না ফেলে, অর্থাৎ সাধ্যের বাইরে নিজের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দেয়; বরং সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করে। তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে। পূর্ণতায় পৌঁছাতে না পারলে কাছাকাছি থাকবে। আশান্বিত থাকবে এবং সকাল-বিকেল ও রাতের একাংশে ইবাদত করে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।’ (বুখারি: ৩৯)

সাধ্যাতীত কাজের আদেশ দেয় না ইসলাম
ইসলামের নীতিমালা মানুষের কল্যাণের জন্য প্রণীত হয়েছে এবং সব বিধানই সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। সাধ্যের বাইরে কোনো বিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। ইসলামের বিধিবিধানের প্রতি লক্ষ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা বাকারা: ২৮৬)

আরও এরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি। এ তো তোমাদের পিতা ইবরাহিমের ধর্ম।’ (সুরা হজ: ৭৮)

ধর্মপালন সহজ করার তাৎপর্য
সহজ করার অর্থ এই নয় যে নিজের ইচ্ছামতো ইবাদত-বন্দেগি করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং কোরআন ও সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে; বরং এর অর্থ হলো, মহান আল্লাহ বান্দার জন্য দ্বীনকে মানা সহজ করেছেন এবং অক্ষম হলে বিকল্প রেখেছেন। কাজেই সাধ্যমতো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যে অবিচল থাকতে হবে, ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছো, তাতে স্থির থাকো, তোমার সঙ্গে যারা ইমান এনেছে, তারাও স্থির থাকুক এবং সীমা লঙ্ঘন কোরো না। তোমরা যা করো তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা হুদ: ১১২) আয়াতে সীমালঙ্ঘন বলে আল্লাহর আনুগত্য এবং নবী (সা.)-এর আদর্শ থেকে সরে দাঁড়ানো বোঝানো হয়েছে। এটাকে বলা হয় চরমপন্থা, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ধর্মপালন সহজ করার উদাহরণ
আল্লাহ তাআলা যেসব মৌলিক ইবাদত-বন্দেগি অপরিহার্য করেছেন, তার মধ্যে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত অন্যতম। প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রেই দৈহিক ও আর্থিক সক্ষমতায় জোর দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) খুতবা দিতে গিয়ে দেখলেন, এক ব্যক্তি সূর্যতাপে দাঁড়িয়ে আছে। নবী (সা.) লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বলা হলো, ‘লোকটি আবু ইসরাইল, সে দাঁড়িয়ে থাকার মান্নত করেছে। সে বসবে না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কারও সঙ্গে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে।’ নবী (সা.) বললেন, ‘তোমরা তাকে নির্দেশ করো—সে যেন কথা বলে, ছায়া গ্রহণ করে, বসে এবং রোজা পূর্ণ করে।’ (বুখারি: ৬৩২) এখানে নবী (সা.) লোকটিকে বাড়াবাড়ি থেকে নিবৃত্ত করলেন।

নামাজের বিধানে
নামাজের জন্য অজু করতে হয়। অজুতে পানি দিয়ে মুখ, হাত, পা ধুতে হয় এবং মাথা মাসেহ করতে হয়। তবে কোনো ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে তায়াম্মুম করার বিধান রয়েছে। মাটিতে হাত স্পর্শ করে মুখ-হাত মাসেহ করলেই হয়ে গেল। আবার চামড়ার মোজা পরে বাড়িতে থাকলে এক দিন-এক রাত এবং সফরে হলে তিন দিন-তিন রাত অজুতে পা না ধুয়ে মোজার ওপর মাসেহ করলেই হয়ে যায়।

এসবের উদ্দেশ্য হলো সহজতা এবং কষ্ট দূর করা। নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়। তবে তা করতে অক্ষম হলে বসে আদায় করতে পারবে। বসেও না পারলে শুয়ে আদায়েরও সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯১)

রোজার বিধানে
সারা বছরে মাত্র এক মাস রোজা রাখা ফরজ। এখানেও আল্লাহ তাআলা মুসাফির ও অসুস্থদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। পরে কাজা আদায়ের সুযোগ রয়েছে। আর একেবারে অক্ষম হলে এবং সক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে ফিদয়া দেওয়ার বিধান রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করে নিতে হবে। এতেও যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য, এর পরিবর্তে ফিদয়া অর্থাৎ একজন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে খাদ্য দান করা।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩ ও ১৮৪)

জাকাতের বিধানে
মুসলিম নর-নারীর বছর শেষে সম্পদের ২ দশমিক ৫ শতাংশ জাকাত হিসেবে দেওয়ার বিধান রয়েছে ইসলামে। সেখানেও আবার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা এবং সেই সম্পদ পুরো এক বছর থাকার শর্ত রয়েছে।

হজের বিধানে
সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে মাত্র একবার হজ পালন করা ফরজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিলেন, ‘হে লোকজন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন; অতএব তোমরা হজ করো।’ এক লোক (আকরা ইবনে হাবিস) বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, প্রতিবছরই কি হজ করতে হবে?’ নবীজি চুপ থাকলেন। লোকটি তিনবার এমন বললেন। এরপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমি যদি জবাবে “হ্যাঁ” বলি, তাহলে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে; তখন তা করতে সক্ষম হবে না।’ (মুসলিম: ৩৩২১)

পরিশেষে বলা যায়, মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সবার জন্য সহজ, সুন্দর দ্বীন হলো ইসলাম। এই দ্বীন অনুশীলনের মাধ্যমেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাপুড়ের রক্তে তৈরি হলো বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিভেনম

সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া

পাথরঘাটায় তিন শিক্ষকের ওপর হামলার‌ অভিযোগ শ্রমিক দল নেতার বিরুদ্ধে

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখলেই পুলিশে সোপর্দ করবেন: সামান্তা

কুষ্টিয়ায় দুই পুলিশকে আসামির হাতুড়িপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত