মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: অনেকে বলেন, রাজনীতিবিদদের হাতে আর রাজনীতি নেই—আপনি কি এর সঙ্গে একমত?
ড. মাহবুব উল্লাহ: রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই, সেটা ঢালাও একটা উক্তি। এটা বলা হয় এ জন্য যে আমাদের সংসদে ৬০ শতাংশ যাঁরা সংসদ সদস্য, তাঁদের জীবিকা বা পেশা হলো ব্যবসা। তাই বলা হয় ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে গ্রাস করেছেন। সে কারণে বলা হয়, রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই।
যেকোনো সমাজের মতো আমাদের সমাজও বিবর্তিত, পরিবর্তিত হচ্ছে। ১৯৭১ বা ৭২ সালে আমাদের সমাজকাঠামোর যে বিন্যাস ছিল, সেটা বিভিন্নভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বাঙালি ও বাংলাদেশিদের কাছে ব্যবসা হলো ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য একটা ভালো উপায়। অনেক তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চিন্তা করে, তারা ব্যবসা করবে। আর তাদের মধ্যে একটি অংশ মনে করে, বিসিএস পাস করে প্রশাসন ক্যাডার হতে হবে। যারা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বসে তার পঠিত বিষয়ে পড়াশোনা না করে, বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করে। সোজা কথা হলো, আমাদের সমাজের একটা পরিবর্তন এসে গেছে।
একসময় রাজনীতি করতেন উকিল-মোক্তাররা। ব্রিটিশ আমলে সেটাই ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। আর মক্কেলদের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা রাজনীতি করতেন। নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সমাজের নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। সেখানে একটা প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলেন ব্যবসায়ীরা। তাই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীরা বেশি সক্রিয়। তাঁদের রাজনীতি করাতে সমস্যা হলো, এটাকে ব্যবহার করেন তাঁদের ব্যবসার প্রসারের জন্য। এ অবস্থায় দেশের সাধারণ জনগণের অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ একটা গোষ্ঠী লাভবান হয়, কিন্তু সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজ একটি দৈনিকে দেখলাম, কোন কোন ব্যবসায়ী বিদ্যুতের জন্য কত টাকা পেয়েছেন। তাঁরা কিন্তু রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেন। আমি মনে করি, আমরা যে পরিবর্তনটা দেখছি, সেটা সমাজের একটা অংশের পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে এই ধারাটাকে পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: রাজনীতি কি ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: তাঁদের থেকে তো এমনিতেই মুক্তি পাওয়া যাবে না। একটা সামাজিক শক্তির বিকাশের কারণে এগুলো হচ্ছে। তাই সামাজিক ডায়নামিক্সের পরিবর্তন করতে পারলে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে গায়ের জোর খাটিয়ে এর পরিবর্তন করা যাবে না। শেখ হাসিনার কথাই বলেন বা খালেদা জিয়ার কথাই বলেন, তাঁরা চাইলেই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের এই বাস্তবতার মধ্যে থেকেই কিন্তু রাজনীতি করতে হয়। কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কখন এই শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এ জন্য প্রয়োজন শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, মেহনতি মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের রাজনীতিতে নিয়ে আসা। তাঁদের সক্রিয় করতে সহায়তা করা। কাজটা কিন্তু আমাদের করতে হবে। তাঁরা যদি শক্তিশালী হতে পারেন, তাহলে অন্য শক্তিগুলো প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। তাঁরা একটা চাপের মধ্যে থাকবেন।
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করেছে। এই দেয়াল ভাঙার উপায় কী?
ড. মাহবুব উল্লাহ: শেষ পর্যন্ত এ ধরনের শক্তি এবং বিস্তারকারী কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠী টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস বলে, ফিলিপাইনে মার্কোস ২০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকে যেতে হয়েছে। ইরানের শাহ বহু বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকেও ক্ষমতা হারাতে হয়েছে। স্পেনে ফ্রাঙ্কো ৩০-৪০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, পর্তুগালে ছিলেন সালাজার—তিনিও গেছেন। এরপর মিসরের হোসনি মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের কথা বলা যায়।
তাই আজ বা কাল হোক তাঁদের কিন্তু যেতে হবে। প্রশ্ন হলো, কেউ একটু বেশি বা কম সময় নিয়ে ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁরা কিন্তু প্রথম দিকে সমাজের মধ্যে ‘ডি-মলারাইজিং’ পরিস্থিতি তৈরি করেন। সন্ত্রাস, ভয় দেখিয়ে, গুম-খুন করে, ন্যায়বিচার না করে, বিপরীত পক্ষের মানুষদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পেশা ধ্বংস করে দিয়ে দেশের মধ্যে একটা ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। সেই পরিবেশের কারণে দেখা যায় যে সাধারণ মানুষ মুখ খোলে না এবং কথা বলতে ভয় পায়।
কিন্তু এভাবে চিরদিন এ অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। রোমানিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন নিকোলাই চসেস্কু। শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন না তাঁর পতন কীভাবে হবে। তিনি একটা জনসভায় বক্তৃতা দিতে গেছেন। বক্তৃতার মাঝখানে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে প্রশ্ন করা শুরু হলো। প্রশ্ন করতে করতে একটা বিরাট বিক্ষোভ শুরু হলো। আর বিক্ষোভ থেকে উত্তাল অভ্যুত্থান। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। সামরিক বাহিনীতে তাঁর যারা বিরোধী ছিল, তারা তাঁকে দুই মিনিটের বিচারের কথা বলে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছিল। তারপর লাশ কৃষ্ণসাগরে ফেলে দিয়েছিল। জনগণের ওপর তাঁর একটা প্রভাব ছিল। তারপরও তিনি কিন্তু টিকে থাকতে পারেননি।
বাংলাদেশ বা যেকোনো দেশের কথা বলি না কেন পরিস্থিতিতে একসময় পরিবর্তন আসে। এটা জনগণ বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাটভাবে কাজ করে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি যে এক দফার আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে কি কোনো ফল আসবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলা উচিত না এবং সংগতও নয়। পুরো বিষয়টা খুব জটিল হয়ে গেছে। একদিকে বিভিন্ন পরাশক্তি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ভারতের কারণে আমরা একটা জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। এখন এই সমীকরণ ভেদ করে যারা উঠে আসতে পারবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে। আর যদি যুক্তরাষ্ট্র সেটাকে ম্যানেজ করতে পারে, তাহলে একটা পরিবর্তন হতে পারে। এটা ঠিক যে বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশে অনেক জনসমাগম হচ্ছে। তবে জনসমাগমের পরেও যদি সরকার পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে লাখ লাখ সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা লাগবে। আমরা দেখেছি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা নিঃস্বার্থ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছিল। একইভাবে কোটাবিরোধী আন্দোলনেও দেখেছিলাম। এভাবে যদি সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে টেনে আনতে পারা যায়, তাহলে এ আন্দোলন সফল হতে পারে, নতুবা সম্ভব নয়।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য হবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: এখন তো পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচন সঠিক ছিল না। এখন বিদেশি পত্রপত্রিকায় যেসব লেখা প্রকাশিত হচ্ছে এবং নামকরা সাংবাদিকেরা যেসব কলাম লিখছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে অতীতের দুই নির্বাচনকে তাঁরা গ্রহণযোগ্য বলতে পারছেন না।
বিশাল একটা দলকে বাইরে রেখে যদি নির্বাচন করা হয়, সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ কেমন হতে পারে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: প্রতিটি ঘটনারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। আমরা হয়তো বিচার-বিশ্লেষণও করিনি, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? সে রকম কোনো বিশ্লেষণ আমি লক্ষ করিনি। একই কথা বলব, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে এবং এরশাদ চলে যাওয়ায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো কেমন হয়েছিল? সেটা কীভাবে ছাপ ফেলেছে। এসব নিয়ে আমরা কিন্তু কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করিনি।
তবে এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে সমাজে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একটা পুকুরে ঢিল মারলে যেমন অল্প সময়ের জন্য হলেও একটা তরঙ্গ ওঠে, সমাজ তো আর পুকুরের মতো না। সে তো বিশাল। এখানে নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। তবে আমরা এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ করি না।
এখন যে প্রশ্নটা উঠছে, এত দিন ধরে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা যদি চলে যান, তাহলে নিঃসন্দেহে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। অতীতে যাঁরা ক্ষমতাবান ছিলেন, যথেচ্ছাচার করেছেন, তাঁরা থাকবেন না। আবার নতুন করে ক্ষমতাবান এবং যথেচ্ছাচার তৈরি হবে। এ ছাড়া নিয়মকানুনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। দেখা যাবে, ১৫ বছরের শাসনে যাঁরা টাকাপয়সা করেছেন, তাঁরা তখন বলবেন—এখন আমাদের ব্যবসা খারাপ। আবার দেখা যাবে যে নতুন একটা গোষ্ঠী, তাঁরাও সেভাবে করছেন। মোটা দাগে এই পরিবর্তনগুলো হয়। কিন্তু সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সমাজে একটা পরিবর্তন হয়। সোজা কথা, সমাজের মধ্যে কারা ক্ষমতা বিস্তার করছে, সেই গোষ্ঠীর একটা পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনে জনগণের জন্য শুভ হবে কি না, সেটা আগাম বলা যাবে না।
আজকের পত্রিকা: অনেকে বলেন, রাজনীতিবিদদের হাতে আর রাজনীতি নেই—আপনি কি এর সঙ্গে একমত?
ড. মাহবুব উল্লাহ: রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই, সেটা ঢালাও একটা উক্তি। এটা বলা হয় এ জন্য যে আমাদের সংসদে ৬০ শতাংশ যাঁরা সংসদ সদস্য, তাঁদের জীবিকা বা পেশা হলো ব্যবসা। তাই বলা হয় ব্যবসায়ীরা রাজনীতিকে গ্রাস করেছেন। সে কারণে বলা হয়, রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি নেই।
যেকোনো সমাজের মতো আমাদের সমাজও বিবর্তিত, পরিবর্তিত হচ্ছে। ১৯৭১ বা ৭২ সালে আমাদের সমাজকাঠামোর যে বিন্যাস ছিল, সেটা বিভিন্নভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, বাঙালি ও বাংলাদেশিদের কাছে ব্যবসা হলো ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য একটা ভালো উপায়। অনেক তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চিন্তা করে, তারা ব্যবসা করবে। আর তাদের মধ্যে একটি অংশ মনে করে, বিসিএস পাস করে প্রশাসন ক্যাডার হতে হবে। যারা বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বসে তার পঠিত বিষয়ে পড়াশোনা না করে, বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করে। সোজা কথা হলো, আমাদের সমাজের একটা পরিবর্তন এসে গেছে।
একসময় রাজনীতি করতেন উকিল-মোক্তাররা। ব্রিটিশ আমলে সেটাই ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। আর মক্কেলদের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা রাজনীতি করতেন। নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সমাজের নতুন ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। সেখানে একটা প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলেন ব্যবসায়ীরা। তাই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীরা বেশি সক্রিয়। তাঁদের রাজনীতি করাতে সমস্যা হলো, এটাকে ব্যবহার করেন তাঁদের ব্যবসার প্রসারের জন্য। এ অবস্থায় দেশের সাধারণ জনগণের অনেক ক্ষতি হয়। বিশেষ একটা গোষ্ঠী লাভবান হয়, কিন্তু সারা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আজ একটি দৈনিকে দেখলাম, কোন কোন ব্যবসায়ী বিদ্যুতের জন্য কত টাকা পেয়েছেন। তাঁরা কিন্তু রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেন। আমি মনে করি, আমরা যে পরিবর্তনটা দেখছি, সেটা সমাজের একটা অংশের পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে এই ধারাটাকে পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: রাজনীতি কি ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে পারবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: তাঁদের থেকে তো এমনিতেই মুক্তি পাওয়া যাবে না। একটা সামাজিক শক্তির বিকাশের কারণে এগুলো হচ্ছে। তাই সামাজিক ডায়নামিক্সের পরিবর্তন করতে পারলে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে গায়ের জোর খাটিয়ে এর পরিবর্তন করা যাবে না। শেখ হাসিনার কথাই বলেন বা খালেদা জিয়ার কথাই বলেন, তাঁরা চাইলেই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের এই বাস্তবতার মধ্যে থেকেই কিন্তু রাজনীতি করতে হয়। কাজেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কখন এই শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এ জন্য প্রয়োজন শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, মেহনতি মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের রাজনীতিতে নিয়ে আসা। তাঁদের সক্রিয় করতে সহায়তা করা। কাজটা কিন্তু আমাদের করতে হবে। তাঁরা যদি শক্তিশালী হতে পারেন, তাহলে অন্য শক্তিগুলো প্রকৃতিগতভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। তাঁরা একটা চাপের মধ্যে থাকবেন।
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করেছে। এই দেয়াল ভাঙার উপায় কী?
ড. মাহবুব উল্লাহ: শেষ পর্যন্ত এ ধরনের শক্তি এবং বিস্তারকারী কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠী টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস বলে, ফিলিপাইনে মার্কোস ২০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকে যেতে হয়েছে। ইরানের শাহ বহু বছর ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁকেও ক্ষমতা হারাতে হয়েছে। স্পেনে ফ্রাঙ্কো ৩০-৪০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, পর্তুগালে ছিলেন সালাজার—তিনিও গেছেন। এরপর মিসরের হোসনি মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের কথা বলা যায়।
তাই আজ বা কাল হোক তাঁদের কিন্তু যেতে হবে। প্রশ্ন হলো, কেউ একটু বেশি বা কম সময় নিয়ে ক্ষমতায় থাকবেন। তাঁরা কিন্তু প্রথম দিকে সমাজের মধ্যে ‘ডি-মলারাইজিং’ পরিস্থিতি তৈরি করেন। সন্ত্রাস, ভয় দেখিয়ে, গুম-খুন করে, ন্যায়বিচার না করে, বিপরীত পক্ষের মানুষদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পেশা ধ্বংস করে দিয়ে দেশের মধ্যে একটা ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। সেই পরিবেশের কারণে দেখা যায় যে সাধারণ মানুষ মুখ খোলে না এবং কথা বলতে ভয় পায়।
কিন্তু এভাবে চিরদিন এ অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব নয়। রোমানিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন নিকোলাই চসেস্কু। শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তিনি নিজেও জানতেন না তাঁর পতন কীভাবে হবে। তিনি একটা জনসভায় বক্তৃতা দিতে গেছেন। বক্তৃতার মাঝখানে সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে প্রশ্ন করা শুরু হলো। প্রশ্ন করতে করতে একটা বিরাট বিক্ষোভ শুরু হলো। আর বিক্ষোভ থেকে উত্তাল অভ্যুত্থান। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। সামরিক বাহিনীতে তাঁর যারা বিরোধী ছিল, তারা তাঁকে দুই মিনিটের বিচারের কথা বলে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছিল। তারপর লাশ কৃষ্ণসাগরে ফেলে দিয়েছিল। জনগণের ওপর তাঁর একটা প্রভাব ছিল। তারপরও তিনি কিন্তু টিকে থাকতে পারেননি।
বাংলাদেশ বা যেকোনো দেশের কথা বলি না কেন পরিস্থিতিতে একসময় পরিবর্তন আসে। এটা জনগণ বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে বিরাটভাবে কাজ করে।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি যে এক দফার আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে কি কোনো ফল আসবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলা উচিত না এবং সংগতও নয়। পুরো বিষয়টা খুব জটিল হয়ে গেছে। একদিকে বিভিন্ন পরাশক্তি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন ও ভারতের কারণে আমরা একটা জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়ে গিয়েছি। এখন এই সমীকরণ ভেদ করে যারা উঠে আসতে পারবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে। আর যদি যুক্তরাষ্ট্র সেটাকে ম্যানেজ করতে পারে, তাহলে একটা পরিবর্তন হতে পারে। এটা ঠিক যে বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশে অনেক জনসমাগম হচ্ছে। তবে জনসমাগমের পরেও যদি সরকার পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে লাখ লাখ সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা লাগবে। আমরা দেখেছি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা নিঃস্বার্থ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছিল। একইভাবে কোটাবিরোধী আন্দোলনেও দেখেছিলাম। এভাবে যদি সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে টেনে আনতে পারা যায়, তাহলে এ আন্দোলন সফল হতে পারে, নতুবা সম্ভব নয়।
আজকের পত্রিকা: বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কি গ্রহণযোগ্য হবে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: এখন তো পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা বলছেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচন সঠিক ছিল না। এখন বিদেশি পত্রপত্রিকায় যেসব লেখা প্রকাশিত হচ্ছে এবং নামকরা সাংবাদিকেরা যেসব কলাম লিখছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে অতীতের দুই নির্বাচনকে তাঁরা গ্রহণযোগ্য বলতে পারছেন না।
বিশাল একটা দলকে বাইরে রেখে যদি নির্বাচন করা হয়, সেই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে না।
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ কেমন হতে পারে?
ড. মাহবুব উল্লাহ: প্রতিটি ঘটনারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। আমরা হয়তো বিচার-বিশ্লেষণও করিনি, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল? সে রকম কোনো বিশ্লেষণ আমি লক্ষ করিনি। একই কথা বলব, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে এবং এরশাদ চলে যাওয়ায় সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো কেমন হয়েছিল? সেটা কীভাবে ছাপ ফেলেছে। এসব নিয়ে আমরা কিন্তু কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করিনি।
তবে এ ধরনের পরিবর্তনের ফলে সমাজে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একটা পুকুরে ঢিল মারলে যেমন অল্প সময়ের জন্য হলেও একটা তরঙ্গ ওঠে, সমাজ তো আর পুকুরের মতো না। সে তো বিশাল। এখানে নানা ধরনের পরিবর্তন হয়। তবে আমরা এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ করি না।
এখন যে প্রশ্নটা উঠছে, এত দিন ধরে যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা যদি চলে যান, তাহলে নিঃসন্দেহে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। অতীতে যাঁরা ক্ষমতাবান ছিলেন, যথেচ্ছাচার করেছেন, তাঁরা থাকবেন না। আবার নতুন করে ক্ষমতাবান এবং যথেচ্ছাচার তৈরি হবে। এ ছাড়া নিয়মকানুনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। দেখা যাবে, ১৫ বছরের শাসনে যাঁরা টাকাপয়সা করেছেন, তাঁরা তখন বলবেন—এখন আমাদের ব্যবসা খারাপ। আবার দেখা যাবে যে নতুন একটা গোষ্ঠী, তাঁরাও সেভাবে করছেন। মোটা দাগে এই পরিবর্তনগুলো হয়। কিন্তু সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সমাজে একটা পরিবর্তন হয়। সোজা কথা, সমাজের মধ্যে কারা ক্ষমতা বিস্তার করছে, সেই গোষ্ঠীর একটা পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনে জনগণের জন্য শুভ হবে কি না, সেটা আগাম বলা যাবে না।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১৫ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫