Ajker Patrika

ভেতরে ‘উৎসব’, বাইরে কান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫২
ভেতরে ‘উৎসব’, বাইরে কান্না

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু হতেই সারবেঁধে দাঁড়িয়ে নিম্নবিত্তেরা তা সংগ্রহ করছিলেন। কম দামে পণ্য কিনতে পেরে সবার মুখেই ছিল হাসি। ভেতরে যখন এমন উৎসবমুখর পরিবেশ, গেটের বাইরে তখন কান্না। এই কান্না রেশন কার্ড না পাওয়ার।

গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে এই চিত্র ছিল ২ নম্বর গেট এলাকার সামারা কনভেনশন সেন্টারে। গতকাল থেকেই চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি। এদিন অনেকে কিনতে পারেননি। কেননা, তাঁদের রেশন কার্ড ছিল না। এ জন্য তাঁদের গেটের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এই মানুষেরা বলছেন, কার্ড করার জন্য তাঁদের কাছে কেউ যাননি। কীভাবে কার্ড পাবেন, তা-ও তাঁরা জানেন না।

কার্ড না পাওয়ায় পণ্য কিনতে না পারাদের একজন হালিমা খাতুন। নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদের তুলাতলি বস্তিতে তাঁর বসবাস।

গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেকার ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় এত দিন দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য সংগ্রহ করতাম। অনেক মানুষ দেখে এখানেও পণ্য কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু কার্ড না থাকায় আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’

একপর্যায়ে কেঁদে ওঠেন হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে তো কার্ড বানাতে কেউ যায়নি। আমি কোথায় কার্ড পাব। এখন কার্ড ছাড়া টিসিবির পণ্য কিনতে না পারলে কী খেয়ে বাঁচব।’

কার্ড না পাওয়াদের আরেকজন মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। কার্ড না থাকায় এই তরুণও পণ্য কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা জালালাবাদ ওয়ার্ডে। দুই দিন ধরে আমার মা ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়েছিলেন কার্ডের জন্য। কিন্তু সেখানকার লোকেরা দেবে দেবে করে দেননি। সে জন্য এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখানেও কার্ড না থাকায় বের করে দেওয়া হয়েছে।’

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক অবস্থা দেখে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররাই তালিকা অনুসারে কার্ড বিতরণ করছেন। যাঁরা কার্ড পাননি, তাঁদের অনেকের অভিযোগ, কাউন্সিলররা কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে নিজেদের লোকদের গুরুত্ব দিয়েছেন।

তবে সামারা কনভেনশন সেন্টারে পরিদর্শন করতে এসে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘কার্ড বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

যাঁরা কার্ড পাচ্ছেন না, তাঁদের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ।

পবিত্র রমজান উপলক্ষে সারা দেশে ১ কোটি পরিবারের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ করছে সরকার। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২টি পরিবার আছে। প্রথম দিন ২ নম্বর গেটসংলগ্ন সামারা কনভেনশন সেন্টার, জেএম সেন হল, কর্ণফুলীর শিকলবাহা এলাকায় টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। 
সামারা কনভেনশন সেন্টারে পরিদর্শনের সময় জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘নিম্নবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের সবাই টিসিবির রেশন কার্ডের আওতায় আসবে। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করছি, এসব অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে ভেঙে যাবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত