Ajker Patrika

সাদা ইলিশে কালো হাত

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ১০: ১৪
সাদা ইলিশে কালো হাত

ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। উপকূলের মৎস্যবন্দরগুলোতে প্রতিদিন নামছে ট্রলারভর্তি ইলিশ। অথচ বরিশাল নগরের পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে তিন দিন ধরে সাগরের ইলিশই নামছে না।

সাগরে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় ভরা মৌসুমে এ মোকামে ইলিশের ছড়াছড়ি লেগে যাওয়ার কথা। মোকামে ইলিশের সংকটের কারণ খুঁজতে গিয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে এ মোকামেরই একশ্রেণির মৎস্য ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। জেলে ও ট্রলারমালিকদের অভিযোগ, জোর করে মাছের দাম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার ইলিশের মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, মাছ নেই বললেই চলে। কেবল নদীর কিছু মাছের ওপরই ভরসা ব্যবসায়ীদের। সাগর থেকে আসা ট্রলারের একাধিক জেলে জানান, পোর্ট রোডে ইলিশ নামালে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। জোর করে মাছের দাম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না ট্রলারমালিক ও জেলেরা। এ কারণেই বরিশালে সাগরের ইলিশ আসা কমে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে জানান, কয়েক দিন আগে সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে পোর্ট রোড মোকামে ৪-৫টি ট্রলার আসে। একটি ট্রলারে ডাক ওঠে ইলিশের মণ ২৪ হাজার টাকা। এরপরও ওই মাছ ২১ হাজার টাকা মণ দরে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন ট্রলারমালিক।

ওই ট্রলারের একাধিক জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দর ২৪ হাজার টাকা ওঠার পরেও মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা কমিয়ে মাছ দিয়ে আসতে হয়েছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে এ ঘাটে এমনটা ঘটছে। এ জন্য বরিশালে মাছের ট্রলার ভেড়াতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁরা।

মোকামের মৎস্য আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার ইলিশ এসেছিল মাত্র ৮০ মণের মতো। ভরা মৌসুমেও তিন দিন ধরে সাগরের বোট আসছে না। তাই ইলিশের দাম অনেক বেশি। গতকাল এলসি (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) সাইজের ইলিশ মণপ্রতি ৪৪ হাজার, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ৫০ হাজার টাকা মণ এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩৫ হাজার টাকা মণে বিক্রি হয়েছে। এবার মাছ ট্রাকে চলে যাচ্ছে, তাই এখানে ট্রলার আসছে কম। জেলেদের দাম না পাওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।

এসব বিষয়ে জানতে বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে মোকামের মৎস্য ব্যবসায়ী ইয়ার উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাগরে মাছ নাই। তাই তিন-চার দিন বোট আসে না। তা ছাড়া সড়কপথেও মহিপুর, পাথরঘাটা, ভোলার মাছ চলে যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে।

জেলেদের আনা মাছ জোর করে কম দামে কিনে নেওয়ার বিষয়ে ইয়ার উদ্দিন বলেন, ‘ওপেন মার্কেটে ইলিশের দর ওঠে। দাম না পাওয়ার বিষয়টি ভুল ধারণা। অনেক সময় মাছের দর একটা ওঠে, কিন্তু পরে দেখা যায় ভেতরে মাছের কোয়ালিটি খারাপ। তখন মাছের দাম কমে যায়। পোর্ট রোড মোকামে প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ নেই।’

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক আনিছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করায় মাছ কম আসছে। এটা ঠিক যে বরিশাল পোর্ট রোডেও কোনো কোনো ব্যবসায়ী সাগর ও নদী থেকে আসা মাছ বিকিকিনিতে প্রভাব খাটায়। এ জন্য অনেক সময় ন্যায্যমূল্য পায় না জেলেরা। এ ধরনের অভিযোগ নানা সময় পাওয়া যাচ্ছে। তাই মোকামগুলো নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত