Ajker Patrika

ঝরে গেল ৩ হাজার শিক্ষার্থী

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ৪০
ঝরে গেল ৩ হাজার শিক্ষার্থী

নওগাঁর মান্দায় করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ঝরে পড়েছে অন্তত ৩ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ৮০ শতাংশ ছাত্রী। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে, বিদ্যালয় খোলার পর অনুপস্থিতির ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। একে ঝরে পড়া বলা যাবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪টি। এর মধ্যে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৬৭ জন। গত ১২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে সারা দেশে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়। এরপর বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে মাদ্রাসাগুলোতে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তালিকা তৈরি করেনি শিক্ষা অফিস।

উপজেলার আলালপুর হাজী শেখ আলম উচ্চবিদ্যালয়, দেউল-দুর্গাপুর আল আরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির চিত্র দেখা গেছে। আলালপুর উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে মাত্র তিনজন ছাত্রী উপস্থিত ছিল। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১ জন। এর মধ্যে ঝরে পড়েছে ২৬ জন। বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে ১৬ জন ছাত্রী। অন্যদের মধ্যে কিছু ছাত্র ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছে। অন্যরা লেখাপড়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে বিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছে।

দেউল দুর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলে, ‘তার ক্লাসে ছাত্রী ছিল ১৫ জন। করোনার সময় বাড়িতে থাকা অবস্থায় অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন মাত্র ৫ জন ছাত্রী নিয়মিত ক্লাস করছে।’

একই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলে, ‘মাদ্রাসা বন্ধ থাকার সময় আমার কয়েকজন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, করোনা মহামারির কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ জন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছে। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন তিনি।

গাইহানা-কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি সাহাদত হোসেন বলেন, একদিকে করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ, অন্যদিকে মা-বাবার অসচেতনতা ও দারিদ্র্যের কারণে বহু ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলম সেখ বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময়ে কতজন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ চলছে।

শাহ্ আলম সেখ আরও বলেন, বর্তমানে ৩ হাজার ৩৫১ জন ছাত্র-ছাত্রীর অনুপস্থিতির একটি তালিকা করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী করতে কাজ করছে তাঁর দপ্তর। এ লক্ষ্যে আগামী মঙ্গলবার উপজেলার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে একটি ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, এত শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখাসহ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে প্রয়োজনে শিক্ষকদের বাড়ি-বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মৌচাকে গাড়িতে লাশ: ২৫ লাখ টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে জাকিরকে শ্রীলঙ্কায় নিয়েছিল দালাল

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

টেলিটক এখন গলার কাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সিন্ধু পানিবণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের বড় জয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত