Ajker Patrika

চাঁদপুরে অবৈধ স্থাপনায় সংকুচিত সড়ক, জনভোগান্তি

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
চাঁদপুরে অবৈধ স্থাপনায় সংকুচিত সড়ক, জনভোগান্তি

আন্তজেলা যোগাযোগের জন্য চাঁদপুরের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেচ প্রকল্পের বাঁধের ওপর। বাকি সড়কগুলো সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত সম্পত্তিতে। এসব সড়কের পাশে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে সড়ক সংকুচিত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ভুগছে সাধারণ মানুষ। এদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সড়ক বিভাগের তেমন উদ্যোগ নেই। তবে তারা বলছে, শিগগির উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে তাদের।

জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কে চাঁদপুর সওজ বিভাগের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও এখন আবার একই অবস্থা। অভিযানের কয়েক মাসের মধ্যে আবারও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সড়কের পাশে। বিশেষ করে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের চাঁদপুর থেকে শুরু করে বাবুরহাট, মহামায়া, বাকিলা, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, ওয়ারুক, দোয়া ভাঙা, কালিয়া পাড়া পর্যন্ত। এ ছাড়া চাঁদপুর-রায়পুর সড়ক, ভাটিয়ালপুর-হরিণা ফেরিঘাট, হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর সড়ক, মতলব-পেন্নাই সড়কেও প্রভাবশালী লোকজন সড়কের দুই পাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে ফরিদগঞ্জ ভাটিয়ালপুর, চান্দ্রা বাজার, চান্দ্রা চৌরাস্তা, মতলব দক্ষিণ উপজেলার মুন্সিরহাট বাজার, সদরের বাগাদী চৌরাস্তা, শহরের ওয়্যারলেসসহ আশপাশের এলাকায় বহু অবৈধ স্থাপনা দেখা গেছে।

কথা হলে সদর উপজেলার মহামায়া বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য কবির হোসেন জানান, যাঁরা সড়কের জায়গায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন, তাঁরা কেউ লিজ কিংবা অনুমতি নেননি।

স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব কাজে জড়িত। তাঁরাই সওজ বিভাগের সম্পত্তি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে আসছেন।

সদরের চান্দ্রা পশ্চিম বাজারে ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী খোরশেদ জানান, তিনি ৫ মাস আগে দোকান বাড়া নিয়েছেন। স্থানীয় ফারুক পাটওয়ারী নামের এক ব্যক্তি সড়কের পাশে এই দোকানঘর নির্মাণ করে তাঁর কাছে ভাড়া দিয়েছেন। টিনের তৈরি এই দোকানের ভাড়া মাসে ৩ হাজার টাকা।

মতলব-পেন্নাই সড়কের মুন্সিরহাট বাজার এলাকার বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন ও আব্দুল কুদ্দুছ জানান, সড়কের ওপরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকায় এই বাজারে দিনের অধিকাংশ সময় যানজট লেগে থাকে। ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসবের সময় দুর্ভোগ আরও বাড়ে।

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের বাবুরহাট বাজার দক্ষিণ এলাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করেন শেখ বাড়ির ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন, মোস্তফা শেখসহ অন্যরা। আর বাবুরহাট মতলব-পেন্নাই সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেন ইউনিয়ন বিএনপি নেতা কাউছারসহ তাঁর সহযোগীরা। ওই এলাকার অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিশাল মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগ পরিচয়ধারী কবির হোসেন মিজি।

এদিকে চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের চৌরাস্তা এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাবু গাজী, আরিফুর রহমান আরিফ গাজী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সড়কের পাশে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

চাঁদপুর সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই বিভাগের তৈরি জেলায় সড়ক রয়েছে ৩৬৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বাঁধের ওপর সড়ক রয়েছে। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লার আগে খাজুরিয়া পর্যন্ত রয়েছে ৩৯ কিলোমিটার। সড়ক শাখা-১-এর আওতায় সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন চারজন উপসহকারী প্রকৌশলী। সড়ক শাখা-২-এর আওতায় রয়েছে চাঁদপুর-রায়পুর আঞ্চলিক সড়ক। সড়কটি একজন উপসহকারী প্রকৌশলী সংস্কারসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন।

সড়ক বিভাগ চাঁদপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর আগে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এরপর কাজটি নিয়মিত করার চেষ্টা করা হলেও বিভিন্ন কারণে করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণকারী ব্যক্তিদের নোটিশ দিয়েছি এবং কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে নোটিশ দেওয়ার পর থানায় মামলাও দিয়েছি। যাঁরা সড়কের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগির উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত