Ajker Patrika

কারাতের সর্বোচ্চ খেতাব ‘ড্যান’ পেয়েছেন তুলি

বেলাল হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২, ১১: ৪৩
কারাতের সর্বোচ্চ খেতাব ‘ড্যান’ পেয়েছেন তুলি

শামীমা আখতার তুলি বাংলাদেশ কারাতে অঙ্গনের সর্বোচ্চ ড্যান খেতাবের পদক লাভ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ মার্শাল আর্ট কনফেডারেশন আয়োজিত ‘মুজিব শতবর্ষ ব্ল্যাক বেল্ট সম্মাননা প্রদান-২০২২’ অনুষ্ঠানে তাঁকে ‘ষষ্ঠ ড্যান’ ডিগ্রির সনদ ও সম্মাননা দেওয়া হয়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল তাঁর হাতে পদক তুলে দেন। এই সম্মাননার মধ্য দিয়ে তুলি বর্তমানে বাংলাদেশ কারাতে অঙ্গনের সর্বোচ্চ ‘ড্যান’ পাওয়া নারী কারাতেকা হিসেবে ভূষিত হন। নারীদের আত্মরক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং কারাতে অঙ্গনে অবদানের জন্য তাঁকে এ পদক দেওয়া হয়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে অনুষ্ঠিত ট্র্যাডিশনাল কারাতের বড় প্রতিযোগিতা ‘দ্য ওজাওয়া কাপ’ টুর্নামেন্টের ‘ভ্যাটেরান’ ক্যাটাগরির কাতা ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনি ব্রোঞ্জ পদক জেতেন। ওই প্রতিযোগিতায় ৩০টি দেশের প্রায় নয় শ কারাতেকা নিজেদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া তুলির একমাত্র ছেলে তাহসিন শান লিওন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের ক্যাটাগরিতে কাতা ও কুমিতে ইভেন্টে দুটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন।

ইউনেসকোর আইসিএমের দ্য ফিফথ মার্শাল আর্টস রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ ফর এক্সপার্টস (এমএআরআইই) প্রোগ্রামে ২০২২ সালে বিশ্বের পাঁচজন মার্শাল আর্টের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের একজন তুলি। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এই প্রতিযোগিতামূলক ও সম্মানসূচক গবেষণা প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ক্রীড়াবিদ। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আইসিএম থেকে এ পর্যন্ত এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকাসহ ১৭টি দেশের ২৫ জন ‘অ্যালামনাই’ তৈরি হয়েছেন। রিসার্চ প্রোগ্রামের অ্যালামনাইরা পরে তাঁদের নিজ দেশের ‘লোকাল রিপ্রেজেনটেটিভ’ হিসেবে কাজ করবেন। তুলি আশা করছেন, তাঁর প্রতিনিধিত্বে বাংলাদেশের নাম ও মর্যাদা বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং আন্তর্জাতিক উন্নতির জন্য কাজ করবেন তুলি।

তুলি কারাতে (সোতোকান) ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি নারী। বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখেন। তিনি যোগ আসন, পিলাটিস, ফিটনেস ট্রেনিং, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, ক্রাভ মাগা, শাওলিন কুংফুতে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও সর্বাধিক সনদ পাওয়া বাংলাদেশি নারী ব্যায়াম পরামর্শক।

২০ বছর ধরে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘কমব্যাট জিম বাই তুলি’র মাধ্যমে ১০ হাজারের বেশি সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া টেলিভিশনে স্বাস্থ্যবিষয়ক ব্যায়ামের অনুষ্ঠান পরিচালনা এবং দৈনিক সংবাদপত্রে এ বিষয়ে লেখালেখি করে যাচ্ছেন তুলি। শিশুদের জন্য ইয়োগা ফর কিডস অ্যান্ড এভরিওয়ান, ফান ওয়ার্কআউট ইউজিং প্রপস এবং টিনএজারদের জন্য ওয়ার্কআউট ফর টিন, ফ্যামিলি অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামে বাংলাদেশের প্রথম ব্যায়ামভিত্তিক তিনটি ডিভিডি প্রকাশ করেছেন। ‘ব্যায়াম ছেড়ে দিলে কি মোটা হয়ে যাব?’ নামে একটি বইও প্রকাশ করেছেন তুলি।

বাংলাদেশ কারাতে অঙ্গনের সর্বোচ্চ ড্যান খেতাবের পদক লাভ করেছেন শামীমা আখতার তুলিশামীমা আখতার তুলি পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে। ‘রত্নগর্ভা’ পুরস্কার পাওয়া মায়ের ছয় সন্তানের ছোট তুলি বেছে নেন ব্যায়ামবিদের 
জীবন। তাঁর ভাইবোনেরা দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা ও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত।

একমাত্র সন্তান তাহসিন শান লিওনের জন্মের সময় ‘নন সিরোটিক পোর্টাল হাইপারটেনশন’ রোগে আক্রান্ত হন শামীমা আখতার তুলি। তখন থেকে সেই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মনকে কীভাবে কর্মক্ষম ও সজীব রাখা যায়, সে চেষ্টা শুরু করেন তিনি।  

শামীমা আখতার তুলি বলেন, ‘শুরুর দিকে আমি আমার পরিবার থেকে কোনো রকম সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি; বরং কিছু ক্ষেত্রে তীব্র বিরোধ ছিল। পরিবারের ট্র্যাডিশনাল চিন্তাভাবনা হচ্ছে, পড়াশোনাই সবকিছুর মূলে। পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু করলে পড়াশোনা নষ্ট হবে। আমি নারীদের বলব, ঘাত-প্রতিঘাত আসবেই। তবে তা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত