Ajker Patrika

কচুরিপানায় কী না হয়!

সম্পাদকীয়
কচুরিপানায় কী না হয়!

কয়েক বছর ধরে মানুষজন জানতে পারছেন যে কচুরিপানা উদ্ভিদটা ফেলনা কিছু নয়। অথচ যাঁদের বাড়ির সামনে পুকুর বা জলাশয় ছিল কিংবা যাঁদের বাড়ি নদীর ধারে, তাঁরা অনেকেই কচুরিপানাকে ফেলনা মনে করতে পারেন। স্মৃতি হাতড়ে অনেকে বলতে পারেন, বাড়ির ধারের জলাশয় থেকে কচুরিপানা উঠিয়ে রান্নাবান্না খেলা করেছেন। কচুরিপানার পাতা ছিঁড়ে শাক, কাণ্ড কেটে আলু বা মাংসের নাম দিয়ে ছোট ছোট হাঁড়ি-পাতিলে চড়িয়ে মিছেমিছি রান্না করার অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে। আর বড়দের অভিজ্ঞতা হয়তো কচুরিপানা দিয়ে সার বানানোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

কিন্তু কচুরিপানা সত্যিই যে রান্না করে খাওয়া যায় কিংবা এই উদ্ভিদ দিয়ে নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন করা যায়, তা এখনো অনেকের অজানা থাকতে পারে।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের রফিকুল-জয়তুন দম্পতি তাঁদের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি কুটিরশিল্প প্রকল্প। যেখানে কচুরিপানা দিয়ে পণ্য তৈরি করা হয়। প্রায় ২০ ধরনের পণ্যের মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব টব, ফুলদানি, বালতি, পাটি, ট্রে, ফুলঝুরি, ডিম রাখার পাত্র, পাপোশ, মোড়া, টুপি, আয়নার ফ্রেম, টেবিল ম্যাট ইত্যাদি। আজকের পত্রিকার ‘কচুরিপানাও ফেলনা নয়’ শিরোনামের প্রতিবেদনে রফিকুল-জয়তুনের গল্প পড়লে অনেকের জন্যই সম্ভাবনার দরজা খুলে যেতে পারে। 
বিডি ক্রিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা কচুরিপানা দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা শিখে নেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের আটটি দেশে প্রতিবছর দেড় কোটি থেকে দুই কোটি টাকার কচুরিপানায় তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানির কথা চলছে।

এ তো গেল পণ্যের গল্প। কচুরিপানা যে খাওয়াও যায়, এই তথ্য অনেকের কাছে নতুন ঠেকতে পারে। জেনে রাখা ভালো—এতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন এ, বি, সি আর ক্যালসিয়াম। কচুরলতি, কন্দ, ডাঁটা বা পাতা যেমন খাওয়া যায়, তেমনি এর জ্ঞাতি ভাই কচুরিপানাকেও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। 

২০২০ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরামর্শ দিয়েছিলেন কচুরিপানা নিয়ে গবেষণা করতে। গবেষণা হচ্ছে কি না, এ বিষয়টি অজানা থাকলেও এটুকু বলা যায় যে রফিকুল-জয়তুনরা একটা ‘ফেলনা’ উদ্ভিদ কাজে লাগিয়ে পণ্য রপ্তানি করছেন; যা উৎপাদনকারীর আয়ের পথ যেমন খুলে দিয়েছে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও জায়গা করে নিয়েছে।

অথচ একটা সময় আইন করে কচুরিপানা সাফ করা শুরু হয়েছিল। কারণ—নদীপথে চলাচলে বিঘ্ন, ম্যালেরিয়ার বাহক মশার জন্ম, ধান ও পাট চাষ অসম্ভব হয়ে পড়া। কিন্তু ১৯২০-৩০ দশকের মানুষের কচুরিপানার নানাবিধ উপকার সম্পর্কে জানা ছিল না। কচুরিপানা যেন জন্মাতে না পারে, সে জন্য ষাটের দশকে রাসায়নিক স্প্রে করে জলাশয়গুলো বিষাক্ত করে ফেলা হয়েছিল।

এসব ইতিহাস পেছনে ফেলে নতুন করে কচুরিপানা নিয়ে গবেষণা করলে নিশ্চয়ই আরও সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

সরকারের কমিটি পছন্দ হয়নি, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ‎প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত