Ajker Patrika

সে দিনগুলো বোধ হয় হারিয়ে গেছে

সম্পাদকীয়
সে দিনগুলো বোধ হয় হারিয়ে গেছে

শিশু-কিশোর ও যুবকল্যাণ সংগঠন চাঁদের হাটের পঞ্চাশ বছর পূর্তি হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুবর্ণজয়ন্তী ও প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তারা আক্ষেপ করে বলেছেন, শিশু-কিশোরদের অনেক সংগঠনই হারিয়ে গেছে।

কথাটা ভাবার মতো। সত্যিই শিশু-কিশোরদের ধরে রাখতে পারে, এ রকম সংগঠন এখন হাতে গোনা। তা-ও সব সময় ঠিকভাবে তা চলে না।

একটা সময় ছিল, যখন দৈনিক পত্রিকার হাত ধরে শিশু সংগঠনগুলো এগিয়ে চলত। শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশে পত্রিকাগুলো অবদান রাখত। দৈনিক আজাদের ছিল ‘মুকুলের মাহফিল’, সংবাদের ছিল ‘খেলাঘর’। দৈনিক ইত্তেফাকের ছিল ‘কচি-কাঁচার আসর’, দৈনিক বাংলার ছিল ‘সাত ভাই চম্পা’, পূর্বদেশের ছিল ‘চাঁদের হাট’। পত্রিকায় শিশু-কিশোর উপযোগী লেখা লিখতেন বড়রা, ছোটরাও ছোট থেকে বড় হয়ে উঠত এই সব সংগঠনে জড়িত থাকার কারণে।

এখন অনেক পত্রিকায়ই পাঠকদের নিয়ে নানা সংগঠন আছে বটে, কিন্তু তার সঙ্গে নান্দনিক দূরদৃষ্টির সংযোগ কম। ভেবে দেখতে হবে, কেন পত্রিকার শিশু-কিশোর পাতাগুলো এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। আগে যে শিশু-কিশোর পাতাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো পরিচালনার ভার ছিল কাদের হাতে? বাগবান নামে মোহাম্মদ মোদাব্বের দেখতেন মুকুলের মাহফিল, দাদাভাই নামে রোকনুজ্জামান খান দেখতেন কচি-কাঁচার আসর, বেগম জেব-উন-নিসা আহমদ সম্পাদনা করতেন খেলাঘর, কবি হাবীবুর রহমানও বহুদিন দেখেছেন পাতাটি।

দৈনিক বাংলার সাত ভাই চম্পা দেখতেন আফলাতুন। রফিকুল হক দাদু ভাই দেখতেন দৈনিক পূর্বদেশের চাঁদের হাট। এই নামগুলোর উচ্চারণেই বোঝা যায়, তাঁদের মেধা ও শিশু-কিশোরদের প্রতি ভালোবাসা এক একটি পাতাকে কতটা নান্দনিক করে তুলেছিল। পাতার পাশাপাশি কোনো কোনো পাতার সঙ্গে যুক্ত শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোও সৃজনশীলতার বাহন হয়ে উঠেছিল।

একটা সময় পর্যন্ত পাড়ায় পাড়ায় পাড়ার ছেলেমেয়েদের উদ্যোগেই বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। নাচ, গান, বিতর্ক, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিত পাড়ার ছোটরা। সে দিনগুলো বোধ হয় হারিয়ে গেছে। এখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যুক্ততার সঙ্গে চর্চার যতটা সম্পর্ক আছে, তার চেয়ে বেশি সম্পর্ক হলো নিজেকে জাহির করার। কেউ তো কাউকে শুনতে চায় না, দেখতে চায় না, বুঝতে চায় না। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত সবাই। ‘আমিত্ব’ ভরা এই সময়টিতে সৃজনশীলতা হারিয়ে যেতে বসেছে। যখন শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিকভাবে ঋদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যাচ্ছে, তখন একটা মানবিক ভবিষ্যৎ কী করে গড়ে উঠবে? শিশু-কিশোরদের মধ্যে অমানবিকতার চাষবাস বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাদের মননশীলতার অভাব কতটা দায়ী, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

শরীর আর মন নিয়েই মানুষ। শরীরের খিদে মেটায় খাবার, মনের খিদে মেটায় গতিশীল সৃজনশীলতা। এই দুইয়ের মিলন না ঘটলে মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে না। শিশু বয়স থেকেই মানুষের মনে মানবিক ক্ষেত্র তৈরি করার কাজটি নতুন করে শুরু হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

সরকারের কমিটি পছন্দ হয়নি, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ‎প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত