Ajker Patrika

জঙ্গি ছিনতাই

সম্পাদকীয়
জঙ্গি ছিনতাই

জঙ্গি ছিনতাই হয়েছে খোদ আদালত চত্বর থেকে। দিব্যি দিনের আলোয় হঠাৎ দেখা গেল, পুলিশের চোখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি ভোঁ-দৌড় দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের আর চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দুজন ধরা পড়েছেন। যাঁরা মানুষ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, তাঁরা দিব্যি হেসে-খেলে উধাও হয়ে গেলেন, এ কোনো গর্বের কথা নয়। পশ্চিমা চলচ্চিত্রজগতে এ ধরনের জেল পালানো বা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে অপরাধীদের পালানোর যে চিত্রায়ণ করা হয়, তাতে সেই অপরাধীরা আসলে বীর। বীরেরা যখন জেল থেকে পালায় অথবা পুলিশের চোখে ধুলো দেয়, তখন দর্শক খুশি হয়ে ওঠে, কারণ অন্যায়ের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে নায়ক।

কিন্তু ঢাকার এই পলায়ন-নাটকে যে দুজন সফল হয়েছেন, তাঁরা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই আসামিরা মোটেই বীর নন; বরং তাঁরা নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া খুনি।জঙ্গি সংগঠনের বিকৃত চিন্তাধারা দিয়ে তাঁরা অনুপ্রাণিত। তাঁদের মস্তিষ্ক বদ্ধ জলাশয়ের মতো, এখানে মুক্ত জলস্রোতের আশা করা বৃথা।এহেন জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁদেরই সহযোগীরা, এটা যুগপৎভাবে বিস্ময়ের এবং লজ্জার।

এ ঘটনায় প্রমাণিত হলো, বিপজ্জনক অপরাধীদের ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটাই না নাজুক। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের যেনতেনভাবে, কোনো রকম সতর্ক ব্যবস্থা না নিয়েই কেন আদালতে নিয়ে আসা হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন। আমাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে, ২০১৪ সালে ত্রিশাল ও ভালুকার মাঝামাঝি সাইনবোর্ড এলাকায় প্রায় একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। জঙ্গিরা প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। তাতে একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও দুজন আহত হয়েছিলেন। তিন আসামির একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও বাকি দুজন ভারতে পালিয়ে যান। দণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন জঙ্গিকে নিয়ে প্রিজন ভ্যানটি যাচ্ছিল গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতের দিকে।

সেই ঘটনার পর পুলিশের যে টনক নড়েনি, তারই প্রমাণ রোববারের এ নতুন ঘটনাটি। এ কথা তো পরিষ্কার যে জেল থেকে আসামিদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সেকেলে নিরাপত্তাব্যবস্থাই অবলম্বন করা হয়। কেন ভয়ংকর অপরাধীদের ডান্ডাবেড়ি ছাড়া আদালতে আনা হলো? কেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বারবার আদালতে নিয়ে যেতে হবে? কেন বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? জেলখানা বা হাজতে রেখেও তো ভিডিও ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা যায়। সে ব্যবস্থার কথা কি সংশ্লিষ্ট মহলের অজানা?

পালানোর সব পরিকল্পনা জেলখানায় বসেই হয়। নজরদারি না বাড়ালে আর সেকেলে নিরাপত্তাব্যবস্থায় খুশি থাকলে এই লজ্জা এড়ানো যাবে না। এই ঢিলেঢালা নিরাপত্তাব্যবস্থা বজায় থাকলে সামনে আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করবে আমাদের জন্য। আমরা কি সেটাই চাইব, নাকি এই জঙ্গিদের পাকড়াও করে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হব?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত