Ajker Patrika

বালু চুরিতে ভাঙন-আতঙ্ক

সামিউল মনির, শ্যামনগর
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ১৭
বালু চুরিতে ভাঙন-আতঙ্ক

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়ন-সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর চর থেকে অবৈধভাবে বালু চুরি কোনোভাবে বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসনের অভিযানের আগাম খবরে এক-দু দিন কার্যক্রম স্থগিত রাখা হলেও কয়েক দিনের মধ্যে আগের মতোই বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন তাঁরা। প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র চরটির বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না বলেও দাবি তাঁদের। তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে নানা ধরনের বিপদে পড়ার ভয়ে থাকেন তাঁরা।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকবলিত এলাকার চর থেকে এভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় ভাঙন-আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে আশপাশে বসবাসরতরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিন খোলপেটুয়া নদীর বিড়ালাক্ষী ও নওয়াবেঁকী অংশের চর থেকে বোরিং করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। লোকজনের চোখ এড়াতে রাতে একাধিক ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। তাঁদের অভিযোগ, আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক এক নেতা ও হুমায়ন কবীর নামের একজনসহ দুই প্রভাবশালীর নেতৃত্বে একাধিক চক্র অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বালু উত্তোলন নিয়ে কথা বলতে গেলেও তাঁদের কাজে প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁরা। বিষয়টি বারবার প্রশাসনের কাছে জানানো হলেও কোনোভাবে এ কাজ বন্ধ না হওয়ায় প্রভাবশালীদের বক্তব্যকে সত্য মনে করছেন তাঁরা।

পাইপ দিয়ে দূরের ডোবা ও আড়তে নেওয়া হচ্ছে বালু (ইনসেটে)। গতকাল দুপুরে তোলা ছবিবিড়ালাক্ষী গ্রামের জামির হোসেন বলেন, ‘মাসের পর মাস আমার বাড়ির কাছের খোলপেটুয়ার চর থেকে বালু উত্তোলন করছে কয়েকটি চক্র। এলাকার ডোবা নালা ভরাটসহ নওয়াবেঁকী বাজার ও মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পৃথক আড়ত করে সেখান থেকে উপজেলার সর্বত্র বালু সরবরাহ করছে তাঁরা। অবৈধভাবে ভাঙনকবলিত এসব এলাকা থেকে বালু চুরির বিষয়ে প্রশ্ন তুললে এ কাজে তাঁদের অনুমতি রয়েছে বলে জানাচ্ছে চক্রটি। তিনি জানান, স্থানীয়রা একাধিকবার ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে বালু চুরির বিষয়ে প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক গ্রামবাসী জানান, হুমায়ুন কবীর ও আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু হাসান সমগ্র বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। সাংবাদিক থেকে প্রশাসন—সব পক্ষকে হাত করেই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে চলেছে। বারবার ভাঙনের মুখে পড়া এসব এলাকা থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও কেউ টুঁ শব্দটিও পর্যন্ত করছে না। এভাবে বালু চুরি চলতে থাকলে খোলপেটুয়ার ভাঙন আরও ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর বুড়িগোয়ালিনী এলাকার ভেঙে যাওয়া উপকূল রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে জরুরি ভিত্তিতে খোলপেটুয়া নদী থেকে কিছু পরিমাণ বালু তোলা হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভাঙনকবলিত বাঁধ মেরামত সত্ত্বেও ব্যবসার জন্য বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখেন ওই ঠিকাদার। তাঁদের দাবি, পরবর্তীকালে আরও স্থানীয় চার-পাঁচটি চক্র নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে বালু উত্তোলনে যুক্ত হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘খোলপেটুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনে কাঠের নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাঁদের নয়। আশাশুনির চর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দুটি কার্গো দিয়ে নির্দিষ্ট বালুমহাল থেকে তাঁদের বালু নিজেদের দুটি নিবন্ধিত কার্গো দিয়ে পরিবহন করা হয়। বালু চুরিতে জড়িতরা আমাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারেন।’

তবে যোগাযোগের জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও প্রধান অভিযুক্ত আবু হাসানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে আটুলিয়া ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘রাতে বালু উত্তোলন করলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তবে এই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।’ তিনি জানান, কেউ জানালে পরের দিন সকালে তিনি বিষয়টি দেখতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত