Ajker Patrika

সুদের ফাঁস চাষির গলায়

পিরোজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১০: ১৬
সুদের ফাঁস চাষির গলায়

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলার কিছু এলাকা প্রায় সারা বছর জোয়ার ভাটার কারণে জলাবদ্ধ থাকে। সেখানে কচুরিপানা ব্যবহার করে বছরজুড়ে চলে ভাসমান সবজি চাষ। কিন্তু মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া চড়া সুদের টাকায় চাষাবাদ করে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

বর্তমানে করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন ভাসমান এ সবজির চাষিরা। প্রতি বছর যেভাবে এখানে উৎপাদিত চারার দাম পাওয়া বর্তমানে তা কমে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, শত বছরের বেশি সময় ধরে পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেছারাবাদে ভাসমান সবজির চাষাবাদ করে আসছে চাষিরা। জেলার নাজিরপুর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে ও নেছারাবাদ উপজেলায় ৩৭ হেক্টর নিচু জমিতে ধাপের ওপরে ভাসমানভাবে সবজির চাষাবাদ করা হয়। দুই উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ২০০ জন চাষি এ চাষের সঙ্গে জড়িত। কচুরিপানার ধাপ তৈরি হলে সেসব ভাসমান বীজতলায় বিভিন্ন রকম শাক–সবজি চাষ শুরু হয়।

সম্ভাবনাময় এই কৃষিক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা না থাকায় অনেকটাই হতাশ চাষিরা। চলতি বছর করোনা মহামারির প্রকোপে সবকিছু বন্ধ থাকায় চাষিরা বিভিন্ন মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু মৌসুম শুরু হলেও চারার বাজার ব্যাপক মন্দা যাচ্ছে।

ভৌগোলিকভাবে নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী–দোবড়া, কলারদোয়ানিয়া ও মালিখালী এবং নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা সারা বছর ৫–৮ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ফলে সেখানে কোনো প্রকার চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফসলহানি, পণ্যের মূল্যহ্রাস, বাজারজাত করণে অসুবিধা ও সংরক্ষণ সুবিধার অভাব ইত্যাদি কারণে চাষিরা প্রতি বছর কাঙ্ক্ষিত লাভ পাচ্ছেন না বরং মোটা লোকসানের কবলে পড়ছেন।

স্থানীয় চাষি জামাল হোসেন বলেন, ‘জমি বর্গা নিয়ে ভাসমান সবজির চাষাবাদ করছি। আমার নিজের চাষ করার মতো ১৫–১৬টি ধাপ আছে। একটি বেডে ৭–১০ হাজার টাকা খরচ হয়। করোনার কারণে ব্যাপারীদের আসা–যাওয়া না থাকায় এ বছর দাম ভালো পাচ্ছি না।’

চাষি মোকসেদ আলী বলেন, ‘মহাজন ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করছি আমরা। ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ পেলে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারতাম।’

চাষি হামিদুর শেখ বলেন, ‘শ্রমিকদের এই কাজের জন্য প্রতিদিন ৫০০–৬০০ টাকা দেওয়া লাগে। বাজার দামের ভিত্তিতে আমাদের লাভ হয়। যা গত বছরে চারা প্রতি ৮–৯ টাকা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর কেউ ২ টাকা দিয়েও চারা কিনতে চাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা লাভের মুখ দেখা তো দূরে থাক, ব্যাপক লোকসানে পরব। আমাদের প্রণোদনা ও কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হোক।’

পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী, মনোহরপুর, দেওলবাড়ি ও মালিখালী এই সমস্ত জায়গায় দেখা যায় ৬০–৭০ ভাগ কৃষক ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। আমরা এসব কৃষকের চাষাবাদের মান রক্ষার্থে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া ৪০ জন চাষিকে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড বীজ দেওয়া হয়েছে। যে সকল চাষির নিজস্ব জমি আছে তাদের জন্য কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত