Ajker Patrika

আহ্বায়ক কমিটিতে ২২ মাস পার

মো. শামিন রেজা, রাজবাড়ী
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১২: ১২
আহ্বায়ক কমিটিতে ২২ মাস পার

রাজবাড়ী জেলা বিএনপিতে দ্বন্দ্ব, বিভেদ, বিভক্তি নতুন নয়। নব্বই দশক থেকেই চলে আসছে এ ধারা। বিভক্তি দূর করার জন্য প্রায় দুই বছর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। এখনো আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে কার্যক্রম। জেলার পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে তিনটি ইউনিটের কমিটি দীর্ঘদিন ধরে নেই। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলেরও কমিটি নেই অনেক দিন। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে। নেতাদের দাবি, নমিনেশন নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও গ্রুপিং নেই।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ খৈয়ম গ্রুপ এবং সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ খালেক গ্রুপ। দুই গ্রুপই আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করত। খৈয়ম গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ে এবং খালেক তাঁর ব্যক্তিগত অফিস চত্বরে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে খৈয়মকে সভাপতি ও হারুন অর রশীদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি অনেকেই মেনে নেননি। কমিটি ঘোষণার পর দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। দুই বছরের মাথায় ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর ওই কমিটি ভেঙে জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলীকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সদস্যসচিব করা হয় রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দুলালকে।

সূত্র আরও জানায়, ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি জেলার আটটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ধাপে ধাপে পাঁচটি ইউনিট কমিটি গঠন করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ রাজবাড়ী পৌরসভা, রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা কমিটি এখনো গঠন করা হয়নি। গঠিত কমিটি নিয়েও দলের মধ্যে রয়েছে নানা অভিযোগ। পাল্টা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দুলালকে সদস্যসচিব পদ থেকে সরিয়ে অ্যাডভোকেট কামরুল আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এমএ খালেক। তাঁর মৃত্যুর পরও গ্রুপিং রয়েই গেছে। তাঁর অনুসারীরা এখনো একই অবস্থানে রয়েছেন। এ ছাড়া জেলা ছাত্রদলের কোনো কমিটিই নেই। জেলা যুবদল চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। কৃষক দলের কমিটির মেয়াদ পার হয়ে গেছে অনেক বছর। কিছুদিন আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার নুরুল নেওয়াজ বলেন, ‘দলে বিভক্তি কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়। আমরা সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চাই।’

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম পিন্টু বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে আমরা সব কর্মসূচি পালন করি। কিন্তু সাবেক সভাপতি খৈয়মের লোকজন এসব কর্মসূচিতে আসেন না। তাঁরা বিএনপির নেতৃত্ব নয়, খৈয়ম সাহেবের নেতৃত্বকে মেনে চলেন। এরপরও জেলা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে।’

জেলা বিএনপির গ্রুপিং সম্পর্কে সাবেক সভাপতি খৈয়ম বলেন, ‘গ্রুপিং এখন রাজনীতির সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এমন কোনো দল নেই যেখানে গ্রুপিং নেই। ছোট দল, বড় দল, ক্লাব, পেশাজীবী সংগঠন সব জায়গায় গ্রুপিং। রাজনীতি সুস্থ ধারায় না আসা পর্যন্ত হয়তো এভাবেই চলবে। রাজনীতি লাইনচ্যুত হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে না। গ্রুপিং নিরসনের জন্য আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি। নিজের চেষ্টায় কাউকে উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউকে পৌরসভার মেয়র বানিয়েছিলাম। জানতাম তাঁরা আমার পক্ষের নয়, তবু তাঁদের হয়ে কাজ করেছি। কিন্তু ফলাফল যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে। আমি কখনোই কোনো গ্রুপিংয়ের মধ্যে থাকিনি। এটা তাঁরা নিজেরাই করে। একটা ইনফিরিউরিটি কমপ্লেক্সে ভোগেন তাঁরা।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম দেড় বছর স্থগিত রয়েছে করোনাজনিত কারণে। আমরা ইচ্ছে করলেই কমিটি করতে পারব না বা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারব না। আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ কোনো দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওভাবে দেওয়া থাকে না। বলা হয় ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে। গঠনতন্ত্রে এমন কোনো নিয়ম নেই যে ৯০ দিনের মধ্যেই করতে হবে, না হলে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে। তবে এ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে বলে আশা রাখছি।’

লিয়াকত আলী আরও বলেন, ‘রাজবাড়ী বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং নেই। কয়েকদিন আগে ঢাকায় খৈয়ম ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সাংসদ নামিরুল হক সাবুর সঙ্গে মিটিং করেছি। গ্রুপিংটা হলো নমিনেশনকেন্দ্রিক। কে পাবে কে পাবে না এ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আর পদবি কেন্দ্র থেকে দেবে। সেটা মেনে নিলেই আর কোনো সমস্যা থাকে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতির বেয়াদবি ছুটায় দেব: জামায়াত নেতা সাঈদের ফেসবুক পোস্ট

বিবৃতি দিয়ে রাত ১০টার পর থেকে নেপালের নিয়ন্ত্রণ নিল সেনাবাহিনী

ডাকসুর ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণ জানালেন রিটার্নিং কর্মকর্তা

নেপালের অর্থমন্ত্রীকে দিগম্বর করে নদীতে নিক্ষেপ

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন নেপালের সেনাপ্রধান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত