Ajker Patrika

হীরা ধান চাষে ক্ষতির শঙ্কায় পাঁচ শতাধিক কৃষক

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৪১
হীরা ধান চাষে ক্ষতির শঙ্কায় পাঁচ শতাধিক কৃষক

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় হীরা-২ হাইব্রিড ধান চাষ করে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন পাঁচ শতাধিক কৃষক। গাছ খর্বকায় ও অপরিপক্ব অবস্থায় আগাম এ ধানে শিষ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পাতা মোড়ানো ও ক্ষেত্রবিশেষে হলুদ বর্ণের দেখা গেছে। উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদদের ধারণা, ভাইরাস সংক্রমণ বা বিশেষ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির কারণে ধানগাছগুলো এমন হতে পারে।

কৃষকের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ ও ৮ মার্চ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব ও কীটতত্ত্ব বিভাগের দুজন অধ্যাপক এবং ধানবীজ সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ধানগাছ ও খেত পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ধানের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে কৃষক ও বীজ ডিলারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু আশরাফ খান ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বরাবর মাঠ পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সুপ্রিম সিড হীরা ধানের জাতে গোছাগুলো খর্বাকৃতিতে কুশির সংখ্যার স্বল্পতা, পাতা মোড়ানো ও ক্ষেত্রবিশেষে হলুদ বর্ণের দেখা গেছে। গাছগুলো যথাযথ বৃদ্ধি পায়নি, কোনো কোনোটি বাদামি আকার ধারণ করেছে। ভাইরাস সংক্রমণ বা বিশেষ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতির কারণে ধানগাছগুলো এমন হয়েছে বলে ধারণা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশপাশের এলাকাগুলোতে কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা হীরা-২ হাইব্রিড ধান চাষ করছেন। এ বছর শুধু রামগঞ্জেই ৫ শতাধিক কৃষক এ ধান চাষ করেছেন। বাজারে ৪০ কেজির বস্তা ১২ হাজার ও ১ কেজির প্যাকেট বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। বাজারে এ ধানবীজের চাহিদাও রয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, সঠিক পরিচর্যার পরও ধানগাছ কোনোটি ছোট, কোনোটি লম্বা আকার ধারণ করেছে। কিছু গাছে আগাম শিষ দেখা দিয়েছে। আবার অনেকগুলোর শাখা-প্রশাখাও গজায়নি। অথচ পাশের জমিতে অন্য জাতের বোনা ধানবীজের গাছগুলো স্বাভাবিক রয়েছে। এ বছর মানহীন বীজের কারণেই এমনটি হয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন।

ভাদুরের সমেষপুর গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমি হীরা ধানের বীজ কিনে ৪৫ শতাংশ জমিতে রোপণ করছি। সময়মতো পরিচর্যাও করেছি। এখন খেত দেখে আমার মরণ দশা। শুধু আমার না, শত শত কৃষকের একই অবস্থা।’

কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বেশি ফলনের আশায় ৬০ শতাংশ জমিতে ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এ ধান চাষ করেছি। খেতের অবস্থা দেখে এখন রাতে ঘুমও হয় না। আমরা বীজ কোম্পানির কাছে ক্ষতিপূরণ চাই।’

রামগঞ্জের বাবুল বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বাবুল মিয়া জানান, প্রতিদিনই কৃষকেরা অভিযোগ নিয়ে আসছেন। হয়তো বাজারে হীরা ধানবীজের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এবার গুণগত মান ঠিক রাখতে পারেনি।

সুপ্রিম সিড কোম্পানি মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, রামগঞ্জে এ বছর তাঁদের ৪৪ টন ধানবীজ বিক্রি করা হয়েছে। কৃষকেরা চলমান সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বিষয়টি কোম্পানিকে জানানোর পর সরেজমিনে পর্যবেক্ষণে টিম পাঠিয়েছে। ভাইরাস বা আবহাওয়ার কারণে এমনটি হতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত