Ajker Patrika

তিস্তাপারের গানের সম্রাট

জসিম উদ্দিন, নীলফামারী
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩: ২৫
তিস্তাপারের গানের সম্রাট

‘তিস্তাপারের গানের অনুষ্ঠানে এখন শুনবেন ভাওয়াইয়া।’ আশি ও নব্বইয়ের দশকে যাঁরা রংপুর বেতারের অনুষ্ঠান শুনে বড় হয়েছেন, বিকেল ঠিক চারটায় তাঁরা এ ঘোষণা শুনেছেন নিশ্চিত। পালাগান, বিয়ের গান, কবিগানসহ অনেক ধরনের গান হলেও তিস্তাপারের গানের রাজা ভাওয়াইয়া।

এই ভাওয়াইয়া গানের শিল্পীকুলের একচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন আব্বাসউদ্দীন। তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভাওয়াইয়া গানে তাঁর পরে কে? তিনি নির্দ্বিধায় বলেছিলেন মহেশ চন্দ্র রায়! আজ ১ ফেব্রুয়ারি, ভাওয়াইয়া গানের জগতের এই কিংবদন্তি গীতিকার ও শিল্পীর জন্মদিন। ১০৪ বছর আগে বাংলা ১৩২৫ সনের ১৯ মাঘ মোতাবেক ১৯১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্মেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের রংপুর জেলার কিশোরগঞ্জের পুঁটিমারী গ্রামে। প্রশাসনিক মানচিত্রে সেটি এখন নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা।

মহেশ চন্দ্র রায়ের বাবার নাম বাবুরাম রায় ও মায়ের নাম বিমলা রানী রায়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি মা হারা হন। পিতামহী তাঁকে মায়ের স্নেহে লালনপালন করেন। পরে নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নের দীঘলডাঙ্গী গ্রামের গগনচন্দ্র রায়ের ছোট মেয়ে বীণাপাণি রায়কে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতেই স্থায়ী হন মহেশ চন্দ্র রায়। সে বাড়িতেই ৭৫ বছর বয়সে ১৯৯৩ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

মহেশ চন্দ্র রায় ছিলেন চারণ ভাওয়াইয়া শিল্পী। তাঁর গানের কথায় গ্রাম্য সমাজের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, বিরহ, ব্যথা, কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয় জায়গা পেয়েছিল। অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল সবার কাছে।

সৈয়দপুর শহর থেকে যে রাস্তাটি নীলফামারী চলে গেছে, সেই রাস্তায় শিমুলতলী নামে ছোট্ট একটি বাসস্ট্যান্ড আছে। সেখানে নেমে পশ্চিম দিকে যেতে থাকলে প্রথমেই পড়বে শিমুলতলী গ্রাম। এ গ্রামে ভাওয়াইয়ার আরেক কিংবদন্তি হরলাল রায়ের বাড়ি। গ্রামটি ছাড়িয়ে পশ্চিমে এগিয়ে গেলে রেললাইন। সেটি পার হলেই দীঘলডাঙ্গী গ্রাম। শিমুলতলী আর দীঘলডাঙ্গী—এ দুই গ্রামের মাঝখানে বারুনির ডাঙ্গা নামে বিশাল এক ফাঁকা মাঠ। এ মাঠের পশ্চিম প্রান্তেই মহেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি। যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখনো এ গ্রাম ও সৈয়দপুর শহরেই বসবাস করেন।

কথা হয় মহেশ চন্দ্র রায়ের নাতনি ছায়া রানীর সঙ্গে। তিনি জানান, মহেশ চন্দ্র রায় ছিলেন মূলত চারণশিল্পী। যেকোনো জায়গায়, যেকোনো অবস্থায় যেকোনো বিষয় নিয়ে গান লেখার গুণ ছিল তাঁর।

মাধবীলতা শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন ছইওয়ালা গরুর গাড়িতে চড়ে। ছইয়ের ভেতর থেকে মাথা বের করে তিনি বারবার বাবার বাড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন। এ দেখে মহেশ চন্দ্র রায় লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ভাওয়াইয়া ‘ধীরে বোলাও গাড়ীরে গাড়িয়াল, আস্তে বোলাও গাড়ী/আর এক নজর দেখিয়া নেও মুই, দয়াল বাপের বাড়ি।’ এই মাধবীলতা ছিলেন মহেশ চন্দ্র রায়ের মেয়ে।

মাধবীলতার ছেলে অর্থাৎ মহেশ চন্দ্র রায়ের নাতি গোপালচন্দ্র রায় ওপরের গল্পটি জানালেন এক সকালে, যখন তাঁর সঙ্গে আমাদের কথা হয় সৈয়দপুর শহরে।

আড়াই হাজার নাকি পাঁচ হাজার— মহেশ চন্দ্র রায়ের গানের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে। কিন্তু ‘কানিছাত গারুনু আকাশি আকালি’, ‘টুলটুলিরে টুলটুলি’, ‘আবো তুই মরিয়া গেইলে’সহ তাঁর লেখা বিভিন্ন গানের জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গে কোনো দ্বিমত নেই কারও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত