Ajker Patrika

ঋণ কিস্তিতে স্থগিতাদেশ উঠে যাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৫৫
ঋণ কিস্তিতে স্থগিতাদেশ উঠে যাচ্ছে

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণের কিস্তির ওপর যে স্থগিতাদেশ আছে, তা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পরে আর থাকছে না। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি এবং অর্থনীতি তুলনামূলক সচল হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হতে পারে। তবে কিস্তির ওপর স্থগিতাদেশ সুবিধা প্রত্যাহার করা হলেও, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক সূত্র।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণের কিস্তি আদায়ে গ্রাহকদের কোনো চাপ দেওয়া যাবে না। এমনকি এ সময়ে কেউ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে তাঁকে খেলাপি দেখানো যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছরে ঋণের কিস্তি পরিশোধের ওপর স্থগিতাদেশ সুবিধা বহাল থাকায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। শুধু মামলা জটিলতা ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ঋণের কারণে চলতি বছর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেকে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ঋণের অর্থ পরিশোধ করছেন না। আবার তাঁদের খেলাপিও দেখানো যাচ্ছে না। এমনকি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রকৃত অর্থে কত হয়েছে, তা জানা যাচ্ছে না।’

সূত্র আরও জানায়, একদিকে কিস্তি না দিলে সমস্যা নেই, আবার গ্রাহকও খেলাপিতে পরিণত না হওয়ায় প্রায় দুই বছরে নতুন করে কাউকে খেলাপির তালিকায় নিতে পারেনি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদানের বিষয়ে স্থগিতাদেশ থাকায় সাময়িকভাবে কাউকে খেলাপি না দেখালেও দীর্ঘমেয়াদে খেলাপির হার মারাত্মক বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি প্রকৃত খেলাপির চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ছাড়া ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় অনেক ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধের মানসিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধ করছেন না।

২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা শনাক্ত হওয়ার কয়েক দিন পরই পুরো দেশ লকডাউনে চলে যায়। এ অবস্থায় থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। আর প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকঋণের প্রদেয় কিস্তির ওপর স্থগিতাদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘করোনার প্রভাব কাটিয়ে এখন অর্থনীতি পথচলা শুরু করেছে মাত্র। পণ্য তৈরি ও বিক্রির পরই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। ঋণ পরিশোধের বিদ্যমান সুবিধার মেয়াদ আরও তিন বছর রাখা দরকার।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঋণের ওপর স্থগিতাদেশকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি এসেছে, তা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আর এ বিষয়ে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত