Ajker Patrika

উত্তাল সাগরে পর্যটকের ভিড়

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১২: ১১
উত্তাল সাগরে পর্যটকের ভিড়

ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে উত্তাল বঙ্গোপসাগর। কক্সবাজারসহ চার সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত রয়েছে। এর প্রভাব রোববার রাতে শহরে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল থেকে আকাশও মেঘাচ্ছন্ন। কয়েক জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। জোয়ারের প্রভাবে সাগরের ঢেউও বড় হয়ে সৈকতে আচড়ে পড়ছে।

কিন্তু এসবের কোনো প্রভাবই আটকাতে পারছে না সমুদ্রসৈকতে ছুটে আসা পর্যটকদের। নানান বয়সী পর্যটকদের আনন্দে-উচ্ছ্বাসে গতকাল সোমবারও মুখর ছিল বিশ্বের বৃহত্তম এই সমুদ্রসৈকত। এবারের ঈদে টানা ছুটিতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে।

মাস দেড়েক ধরে তীব্র দাবদাহ ও মাহে রমজানে পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর দুই ঈদে বিধিনিষেধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা সৈকতে আসতে পারেনি। এবার পর্যটক সমাগমের সুযোগ থাকায় মানুষ কক্সবাজারেই ছুটে এসেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট ঈদ উপলক্ষে ৯৫ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। সৈকতপারের পর্যটকনির্ভর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও বেশ বেচাবিক্রি হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সৈকতের পাঁচ শতাধিক দোকানপাট, ঘোড়া, বিচবাইক, চেয়ার-ছাতা (কিটকট), জেডস্কির ব্যবসা, ভ্রাম্যমাণ আলোকচিত্রী, চা-কফি বিক্রির ভ্রাম্যমাণ দোকান, ভাজা মাছ বিক্রির দোকান ও হকারদেরও ভালো ব্যবসা হয়েছে।

লাবণি পয়েন্টের বিচকর্মী বেলাল হোসেন জানান, রোববার থেকে পর্যটক কমতে শুরু করেছে। এখনো গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পর্যটক রয়েছে। এ ছাড়া শহরের বাইরে হিমছড়ি, পাথুরে সৈকত, টেকনাফ, রামু বৌদ্ধবিহার, শৈলদ্বীপ মহেশখালী, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসগেও পর্যটক সমাগম রয়েছে।

গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সমুদ্রসৈকতের লাবণি ও সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, উত্তাল সাগর। একেকটি ঢেউ বড় ফণা নিয়ে তীরে আচড়ে পড়ছে। কয়েক হাজার পর্যটক সাগরে গোসলে নেমে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে রয়েছেন। কেউ জেটস্কি, টায়ার-টিউব নিয়ে ঢেউয়ের ফণায় ডুব দিচ্ছে।

লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা মাইকে প্রচার চালাচ্ছেন। সৈকতের চার কিলোমিটার এলাকায় পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ারে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন লাইফগার্ডের কর্মীরা। লাবণি পয়েন্টে কথা হয় লাইফগার্ডের কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের নানাভাবে বলেও মানানো যাচ্ছে না। কেউ শোনে, কেউ শোনে না। সবাই সাগরে গোসলে নামতে চান।’

আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামের এক পর্যটক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় অশনির ব্যাপারে ভয়ংকর কিছু শুনিনি। সবাই নেমেছে দেখে আমরাও নেমে পড়লাম।’

সৈকতের সিগাল পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের একটি সাইনবোর্ড রয়েছে, সেখানে লেখা আছে, ‘এখানে গুপ্ত গর্ত ও খাল রয়েছে। এখানে গোসল করা নিষেধ।’ এই নির্দেশনাও কেউ মানছেন না। এই পয়েন্টে অন্তত দুই হাজার পর্যটক গোসল করতে দেখা গেছে।

সি-সেফ লাইফগার্ডের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, এখন উত্তাল সাগর। গোসলে নেমে যেন কেউ বিপদের সম্মুখীন না হয়, তার জন্য সৈকতের তিনটি পয়েন্টে ওয়াচ টাওয়ারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, এবারের ঈদে ১০ থেকে ১২ লাখ পর্যটক এসেছে। গত ডিসেম্বরের পরে এবারের ঈদেই সর্বোচ্চ পর্যটক সমাগম ঘটেছে। এখনো উল্লেখযোগ্য পর্যটক রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, সমুদ্রসৈকতের পানির নিচে অনেক সময় গুপ্ত খাল ও গর্ত তৈরি হয়, যা পানির ওপর থেকে বোঝা যায় না। কোনো পর্যটক ভাটার সময় গোসল করতে নেমে স্রোতের টানে এই ধরনের গর্তে পড়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ডুবে মারা যায়।

সমুদ্রসৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপদ গোসলের জন্য শহরের লাবণি, সুগন্ধা ও কলাতলী—এ তিনটি পয়েন্টে বিশেষ ‘সুইমিং জোন’ করা হয়েছে। যেখানে লাল ও হলুদ পতাকা দিয়ে ঘেরাও করা থাকে। এসব পয়েন্টে সূর্যাস্ত পর্যন্ত লাইফগার্ডের কর্মী ও পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত