Ajker Patrika

সিলিন্ডার কেটে স্ক্র্যাপ করে বিক্রি

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৩
সিলিন্ডার কেটে স্ক্র্যাপ করে বিক্রি

লোহার মূল্যবৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিয়ম ভেঙে এলপিজির খালি সিলিন্ডারকে স্ক্র্যাপ করে বাজারে বিক্রি করছে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন এসব ব্যবসায়ী খালি সিলিন্ডার বোতলকে স্ক্র্যাপ করে বিভিন্ন রোলিং মিলে বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত এক বছর ধরেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা লোহার মূল্য বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার ফৌজদারহাট, বারআউলিয়া, মদনহাট ও কদমরসুল এলাকায় গুদাম করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের খালি বোতল এনে তা অবৈধভাবে কেটে স্ক্র্যাপ করছেন। স্ক্র্যাপ করার পর তা উপজেলাজুড়ে থাকা রড তৈরির কারখানাগুলোতে বিক্রি করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা অবৈধ এ ব্যবসায় একদিকে যেমন অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে রড কারখানা মালিকেরা বাজার দরের চেয়ে কম দামে পাওয়ায় তাদের কাছ থেকে এসব স্ক্র্যাপ কিনে নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের তুলা তুলি এলাকায় কুসুম-এর মালিকানাধীন অবৈধ গোডাউনে গত বছরের ১১ জুলাই অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে মন থেকে দশ হাজার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের খালি বোতল ও কয়েকটন স্ক্র্যাপ মালামাল উদ্ধার করেন।

বেশ কয়েকজন এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ী জানান, অসাধু চক্র সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বাজার থেকে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারগুলো কিনে নিয়ে যান। অবৈধ প্রক্রিয়ায় সিলিন্ডার বিক্রির কারণেই হাজার কোটি টাকা লোকসানের পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে এলপিজির বিনিয়োগ খাত। প্রশাসনিক নজরদারির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকানো না হলে বাজারে সিলিন্ডার-সংকটের পাশাপাশি সঠিক সময়ে পণ্য পেতে বেগ পেতে হবে গ্রাহককে।

এলপিজি খাতের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এ অসাধু ব্যবসার কারণে বাজারে সিলিন্ডার তৈরির পাশাপাশি ভোক্তা খাতে বাড়ছে এলপিজির দাম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাটিয়ারি তুলা তুলি সাগর উপকূলীয় এলাকার একটি গোডাউনে দুই শতাধিক এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের খালি বোতল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এলপিজি ছাড়াও সেখানে রয়েছে লাফস, পদ্মা, বসুন্ধরা ও কর্ণফুলীসহ অনেক পরিচিত কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডারের খালি বোতল। বেশ কিছু শ্রমিক গ্যাস এর মাধ্যমে সিলিন্ডারগুলো কেটে তা স্ক্র্যাপে পরিণত করছেন। তবে প্রতিবেদককে দেখার পর কাজ বন্ধ করে সেখান থেকে দ্রুত সরে যান অনেকে।

আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকা এলাকা থেকে বাল্ব ছাড়া খালি সিলিন্ডার প্রতিকেজি ৩৮ টাকা দরে ব্যবসায়ীরা কিনে এনেছেন। এতে ১২ কেজি প্রতি সিলিন্ডারের দাম পড়েছে ৪৫০ থেকে ৪৬০ টাকা। কিন্তু কিনে আনার পরা এসব সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করলে তাতে প্রতি সিলিন্ডারে দেড় থেকে দুই হাজার টাকারও অধিক মুনাফা হয়।

জেএমআই এলপিজি চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ম্যানেজার) মামুনুর রশিদ জানান, প্রতি সিলিন্ডার তৈরিতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ পড়ে কোম্পানির। কিন্তু তারা ভবিষ্যৎ লাভের আশায় ভর্তুকি দিয়ে খরচের চেয়ে কম দামে গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাত করেন। বর্তমানে প্রতিটি কোম্পানি নতুনভাবে সিলিন্ডার তৈরি বন্ধ রেখে পুরোনো সিলিন্ডার রিফিল করে তা বাজারজাত করছেন। যার ফলে পুরোনো সিলিন্ডারগুলো গ্রাহকদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা টাকার বিনিময়ে বাজার থেকে তা সরিয়ে স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করায় বাজারে সিলিন্ডার সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন জানান, নিয়ম অনুযায়ী খালি সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করতে হলে সেটিকে প্রথমে ডিগ্যাসিফিকেশন করতে হয়। তা না করে যদি সিলিন্ডার কাটা হয় তাহলে যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত