Ajker Patrika

ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ

আবদুল আযীয কাসেমি
ইবনে বতুতার চোখে বাংলাদেশ

বিশ্বভ্রমণ: ইবনে বতুতার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ। ৭০৩ হিজরি মোতাবেক ১৩০৪ খ্রিষ্টাব্দে মরক্কোর তানজায় তাঁর জন্ম। পড়াশোনা শেষ করার পর তাঁকে ভ্রমণের নেশা পেয়ে বসে। পুরো বিশ্ব ঘুরে দেখার প্রত্যয় নিয়ে তিনি জন্মভূমি ছাড়েন এবং একাধারে ভ্রমণ করেন—পশ্চিম আফ্রিকা, মিসর, সিরিয়া, হেজাজ, ইরাক, পারস্য, ইয়েমেন, বাহরাইন, তুর্কিস্তান, আফগানিস্তান, ভারতবর্ষ, চীন, মধ্য আফ্রিকাসহ আরও বহু দেশ।

সফরনামা: মাত্র ২৩ বছর বয়সেই ভ্রমণ শুরু করেন ইবনে বতুতা। দীর্ঘ ২৭ বছরের বিশ্বভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে যান। তিনি ছিলেন স্বভাব কবি। যেখানেই গেছেন, স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের সম্মানে কবিতা রচনা করে যে পুরস্কার পেতেন তা দিয়েই ভ্রমণের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন। দীর্ঘ এ ভ্রমণে তিনি বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। সেসব অভিজ্ঞতার নির্মোহ বর্ণনা লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত ‘রিহলা’ বইয়ে। বইটির পূর্ণ নাম ‘তুহফাতুন নুযযার ফি গারাইবিল আমসার ওয়া আজাইবিল আসফার’।

বাংলায় আগমন: ভারতবর্ষ ভ্রমণে এসে ইবনে বতুতা একসময় হাজির হন বাংলায়। সেকালের আধ্যাত্মিক সম্রাট সিলেটের হজরত শাহজালাল ইয়েমেনি (রহ.)-এর সান্নিধ্য পেতেই মূলত তিনি বাংলায় এসেছিলেন। তখন বাংলা অঞ্চলের স্বাধীন শাসক ছিলেন ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ (শাসনকাল ১৩৩৮-১৩৪৯)। মালদ্বীপ থেকে টানা ৪৩ দিন সাগর ভ্রমণ শেষে ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছান। এরপর সিলেটে গিয়ে শাহজালাল (রহ.)-এর সঙ্গে মিলিত হন। রাজধানী সোনারগাঁ ভ্রমণও করেন তিনি। 

বাংলার কথা: সমুদ্রবন্দর ছেড়ে ইবনে বতুতা প্রথম যে শহরে প্রবেশ করেন, তার নাম উল্লেখ করেছেন ‘সোদকাওয়াঁ’। গবেষকদের মতে, তিনি চট্টগামের কথাই বলেছেন। সেখানে তিনি প্রচুর নৌকা দেখতে পান। স্থানীয় লোকজন নৌকার মাধ্যমে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করত। চট্টগ্রামে তিনি যখন প্রবেশ করেন, তখন সেখানকার শাসক শহরে ছিলেন না। তাঁর ব্যাপারে জানা গেল, তিনি দিল্লির শাসকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ সম্পর্কে ইবনে বতুতা সামান্য বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে বিদ্রোহকারী একজন ফকিরের কথাও উল্লেখ করেছেন।

ইবনে বতুতা সিলেটের নাম বলেছেন ‘কামরু পাহাড়’। সিলেটের অধিবাসীদের দেখতে তাঁর মনে হয়েছে তুর্কিদের মতো। সেখানকার লোকদের শারীরিক শক্তির প্রশংসা করেছেন। সিলেটের হজরত শাহজালাল (রহ.) তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করেন। তাঁকে একটি জোব্বা হাদিয়া দেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে একদিন এই জোব্বা তোমার কাছ থেকে কোনো অমুসলিম শাসক ছিনিয়ে নেবেন। শেষমেশ সেটা যাবে অমুক দরবেশের হাতে। পরে ইবনে বতুতা শাহজালাল (রহ.)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব হতে দেখে বিস্মিত হন।

প্রাচুর্যে ভরা নরক: ইবনে বতুতার মতে, খোরাসান তথা আফগানিস্তানের লোকজন বাংলা জনপদকে ‘দোজখপুর আজ নেয়ামত’ বা ‘প্রাচুর্যে ভরা নরক’ বলে থাকেন। এখানকার আর্দ্র আবহাওয়া তাঁর মোটেও পছন্দ হয়নি। আলোর ব্যবস্থা ছিল খুবই অপ্রতুল। রাত হলেই নেমে আসত অদ্ভুত নীরবতা। বাংলার প্রাচুর্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ইবনে বতুতা। তখন চাল উৎপাদিত হতো প্রচুর পরিমাণে। এত সস্তায় চাল তিনি পৃথিবীর কোথাও দেখেননি। মাত্র ৮ দিরহামে পুরো বছরের খোরাক পাওয়া যেত বলে জানিয়েছেন ইবনে বতুতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত