Ajker Patrika

অটোগ্রাফ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২২, ০৯: ৪৯
অটোগ্রাফ

এ কথা অনেকেই জানেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ‘অপরাজিতা’য় অপুর ভূমিকায় অভিনয় করার উদ্দেশে সত্যজিৎ রায়ের কাছে গিয়েছিলেন। বয়স একটু বেশি হওয়ায় সে যাত্রা অভিনয়ের সুযোগ ঘটেনি। সত্যজিৎ কিন্তু ভোলেননি সৌমিত্রের কথা। ‘অপুর সংসার’-এর জন্য ডাক পড়ল সৌমিত্রের। সত্যজিৎ তখন ‘পরশপাথর’ আর ‘জলসাঘর’ দুটো সিনেমা একসঙ্গে তৈরি করছেন। সৌমিত্রকেও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে শুরু করলেন তিনি। তাতে সৌমিত্রের জন্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করা সহজ হবে। তবে এবারই ছবিতে নেবেন, এ রকম কিছু বলেননি। শেষ মুহূর্তে বাদও পড়তে পারেন। একদিন ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ছবিদা, এর নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ইনিই আমার পরের ছবির অপু।’

‘অপুর সংসার’-এর শুটিং চলছিল। সাউন্ড রেকর্ডিস্ট সত্যেন চট্টোপাধ্যায় জানালেন তাঁদের পাড়ার কাছে বেলেঘাটায় ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকটি হবে। চাণক্য চরিত্রে অভিনয় করবেন শিশির ভাদুড়ী।

সত্যজিৎ সৌমিত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যাবে নাকি?’

সৌমিত্র তো একপায়ে খাড়া।

তখন সত্যজিতের গাড়ি ছিল না। শুটিংয়ের পর ট্যাক্সিতে সৌমিত্রকে তুলে নেবেন তিনি। মঞ্চের কাছে পৌঁছানোর পর শিশির ভাদুড়ী যখন জানলেন সত্যজিৎ এসেছেন, তখন তিনি সত্যজিৎ আর সৌমিত্রকে সাজঘরে আসতে বললেন।

সত্যজিৎ বললেন, ‘জানেন, সৌমিত্র আমার ছবিতে ভালো অভিনয় করেছে।’

শিশির ভাদুড়ী বললেন, ‘করবেই তো।’

সেখানে কথা শুরু হতেই এক সপ্রতিভ বালক এসে ঢুকে শিশির ভাদুড়ীর অটোগ্রাফ নিল। এরপর নিল সত্যজিতের। তারপর খাতা বাড়িয়ে ধরল সৌমিত্রের দিকে। দুই গুরুর সামনে খুবই অপ্রস্তুত হলেন সৌমিত্র। তিনি মাটির দিকে তাকিয়ে থাকলেন। শিশির ভাদুড়ী বললেন, ‘কি সৌমিত্র, তোমার কী হয়েছে?’

সত্যজিৎ বললেন, ‘বুঝতে পারছেন না, ও আপনার সামনে সই দিতে লজ্জা পাচ্ছে।’

শিশির ভাদুড়ী বললেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমিও সই দাও।’

সত্যজিৎ রায় বললেন, ‘হ্যাঁ, অভ্যাস করো, এরপরে তো দিতেই হবে।’

সূত্র: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মানিকদার সঙ্গে, পৃষ্ঠা: ২৫-২৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত