Ajker Patrika

কটুকথায় দমে যায়নি রূপা

নিয়াজ মোরশেদ, আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) 
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৩০
কটুকথায় দমে যায়নি রূপা

বিয়ে হয় ১২ বছর বয়সে। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতেন। স্বামী বেকার ছিলেন। নিজ বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। এক সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপারে চাকরির জন্য আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সেখানেই চাকরি হয়। এ সময় পরিবারসহ আশপাশের মানুষ কটুকথা বললেও দমে যাননি তিনি। আজও আছেন এ পেশায়।

রূপা পারভীন (৩২)। তিনি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর এলাকার পশ্চিম আমুট্ট গ্রামের মাঠে (আক্কেলপুর মহিলা কলেজ-সংলগ্ন) লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বাড়ি পৌরসভার বিহারপুর মহল্লায়। তিনি ওই মহল্লার আইয়ুব হোসেনের স্ত্রী।

রূপার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ বছর বয়সে রূপার বিয়ে হয় আইয়ুব হোসেনের সঙ্গে। এই দম্পতির ঘরে দুই ছেলে আছে। বিয়ের সময় রূপা অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। বিয়ের পর পাঁচ বছর রূপা তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতেন। আর রূপার স্বামী আইয়ুব হোসেন তখন ছিলেন বেকার। শত অভাব অনটনের মধ্যেও হাল না ছেড়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন।

এইচএসসি পাসের পর শুরু করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন। এরই মধ্যে দুই ছেলে হয়। বড় ছেলের নাম সিয়াম হোসেন (১২)। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে, আর ছোট ছেলে শায়ন হোসেন (৪) বাড়িতেই থাকে। সন্তানের ভবিষ্যৎ আর নিজের পায়ে দাঁড়ানো মনোবল নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপারে চাকরির জন্য আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ২০১৮ গেটকিপারের চাকরি হয়।

এরপর থেকে রূপা আক্কেলপুর উপজেলার পৌর সদরের রেলওয়ে লেভেল ক্রসিং, কানুপুর হালির মোড় লেভেল ক্রসিং, সর্বশেষ পূর্ব আমুট্ট গ্রামের আক্কেলপুর মহিলা কলেজ-সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

রূপা পারভীন বলেন, ‘১৮ বছরের সংসার জীবনে দুই সন্তানের মা হয়েও চাকরির পাশাপাশি ডিগ্রিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। নারী হিসেবে গেটকিপারের চাকরি পাওয়ার পর পরিবার থেকে শুরু করে অনেক মানুষ আমাকে তিরস্কার করেছিল। এমনকি আমার কর্মস্থলেও অনেক মানুষ এসে ভিড় করত, আর বলত দুনিয়াতে আর চাকরি পায়নি, মেয়ে হয়ে আবার গেটকিপারের চাকরি করতে এসেছে। আমি তাঁদের কথা কান না দিয়ে আজও চাকরি করে যাচ্ছি। আমি আরও পড়াশোনা করে বড় হতে চাই, দেখিয়ে দিতে চাই নারীরাও সমাজে সব কাজ করতে পারে।’

এ বিষয়ে রূপার স্বামী আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘একটা সময় আমাদের সংসারে অনেক অভাব ছিল। শত কষ্টের মধ্যেও আমার স্ত্রী লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। আজ সে চাকরি করছে। আমি চাই ওর মতো শত নারী ঘরে বসে না থেকে কিছু একটা করুক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত