Ajker Patrika

ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তির কমিটিতে ক্ষুব্ধ আ.লীগ

তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১১: ৫৭
ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তির কমিটিতে ক্ষুব্ধ আ.লীগ

দায়িত্ব পাওয়ার পর একের পর এক কমিটি দিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সাংগঠনিক শাখাগুলোর বেশির ভাগ কমিটিই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করছেন তাঁরা। সম্মেলন না করেই এভাবে কমিটি দেওয়ায় ছাত্রলীগের এই দুই শীর্ষ নেতার ওপর ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করেছেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের আগে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন কোনো কমিটি না দিতে বলেছেন জয়-লেখককে।

আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম আওয়ামী লীগ নেতা ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘এটা ছাত্রলীগের অভিভাবকের (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা। সেটা আমরা যোগাযোগ করে তাঁদের জানিয়ে দিয়েছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তাঁদের পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

প্রায় সাড়ে চার বছর আগে ২০১৮ সালের মে মাসে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁদের বাদ দিয়ে আল নাহিয়ান খান জয়কে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত পুনর্মিলনীর সমাবেশে জয় ও লেখককে ভারমুক্ত ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি নভেম্বর মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত ১২১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৩টির কমিটি ঘোষণা করেন জয় ও লেখক। এর মধ্যে মাত্র ৮টি শাখার কমিটি করা হয় সম্মেলনের মাধ্যমে। এই আটটির মধ্যে মাত্র চারটি (টাঙ্গাইল, বান্দরবান, জামালপুর ও মাগুরা) জেলার কমিটি সম্মেলনস্থলেই ঘোষণা হয়। আর রাজশাহী মহানগর, নড়াইল, বরগুনা ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) কমিটি পরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়।

সম্মেলনে না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এভাবে একের পর এক কমিটি ঘোষণা করায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এমনকি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভাপতি শেখ হাসিনার সামনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। গত বছর অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এক সাংগঠনিক সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ নেতারা জেলা সম্মেলন না করে ঢাকায় বসে বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি ঘোষণা করেন। বৈঠকে বিতর্কিত ও বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যদের ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে বসানোর অভিযোগও করেন তিনি। তবে, ওই সময় বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলটির জাতীয় সম্মেলনের আগেই শেষ করা হবে। এরই অংশ হিসাবে ছাত্রলীগকে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করতে বলা হয়। জয় ও লেখক তারিখ ঘোষণা করতে গড়িমসি করায় আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়, ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় তাঁদের কমিটি দেওয়ার ক্ষমতা আর নেই। তাঁরা নতুন কোনো কমিটি ঘোষণা করতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগের নির্দেশনার পরেও ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার স্বাক্ষরে ৮টি সাংগঠনিক শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ঘোষিত পিরোজপুর কমিটির নিয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় নেতারা। সেখানে বলা হয়, অছাত্র ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিদের নিয়ে আর্থিক সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশনার পরেও নতুন করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করায় কেন্দ্রীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে তিনি নেতাদের ছাত্রলীগ নেতাদের কমিটি ঘোষণা করতে নিষেধ করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে জানিয়ে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে দেখভালের জন্য দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হককে দায়িত্ব দেওয়া আছে।

বি এম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্মেলন না করে মনগড়া কিছু লোকের নাম দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁরা কমিটি দিচ্ছেন। এটা তো অনৈতিক, সংগঠনবিরোধী। এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে সংগঠন ধ্বংস হবে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’

ছাত্রলীগের রেওয়াজ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় এই তিন শাখার সম্মেলন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে এই তিন শাখার কমিটিও ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘমল্লারের জবাবের পর ডাকসু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যা লিখলেন শশী থারুর

সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ডে স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন ফখরুল

শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না জাবি শিক্ষক মৌমিতার

অনিয়মের অভিযোগ এনে জাকসু নির্বাচন কমিশন সদস্যের পদত্যাগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত