Ajker Patrika

আসামি প্রভাবশালী বলেই কি

সম্পাদকীয়
আসামি প্রভাবশালী বলেই কি

ঘটনাটি স্বাভাবিক নয় বলেই খবর হয়েছে। ‘কোটি টাকার মামলা করে আসামি চিনলেন না বাদী’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি পড়ে যে কেউ একদিকে বিস্মিত হবেন, অন্যদিকে প্রশ্ন জাগবে, ব্যাপারটা কী? বাদী কেন আসামিকে চিনবেন না? তিনি তো অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেননি। ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে নির্দিষ্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কিন্তু আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বাদী বন্ধন নাথ কেন আসামিদের না চেনার কথা বললেন?

এই প্রশ্নের উত্তরও প্রকাশিত খবরেই আছে। খবরে উল্লেখ আছে, এই মামলার আসামিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ছয় আসামির মধ্যে প্রধান আসামি দেবাশীষ নাথ দেবু চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। এই রাজনৈতিক পরিচয় যাঁর, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার হিম্মত দেখালেও সাক্ষ্য দিয়ে অপরাধী প্রমাণ করার ঝুঁকি সম্ভবত নিতে চান না বাদী বন্ধন নাথ।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা কুয়েতপ্রবাসী বন্ধন নাথ তাঁর মালিকানাধীন জমি উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ডিজাইন সোর্স লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এ ঘটনায় আসামিরা তাঁর কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। বন্ধন নাথ চাঁদা দিতে অস্বীকার করে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে। এজাহারে উল্লিখিত আসামি এ কে এম নাজমুল আহসান বন্ধন নাথকে গুলিও করেন বলে জানা গেছে।

এরপর বন্ধন নাথের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরীর সাগরিকা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দেবাশীষ নাথ দেবু। গ্রেপ্তারের পর ওই বছরের ১৮ মার্চ জেলগেটে দেবাশীষ নাথ দেবু ও মঞ্জুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ালী উদ্দিন আকবর (বর্তমানে নগরীর আকবরশাহ থানার ওসি)। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেন।

তারপর আদালতে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছরের ২১ আগস্ট এই মামলার চার্জ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিচার শুরু করেন আদালত। ২১ জুন এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সাক্ষ্য দিতে এসে মামলার বাদী বন্ধন নাথ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের শনাক্ত করতে পারেননি বলে আদালতকে জানান। এরপর মামলাটি পরবর্তী বিচারিক কার্যক্রমের জন্য রেখে দেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৭-এর বিচারক শামসুল আরেফিন।

ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৬ সালে। মামলা, তদন্ত, বিচার প্রক্রিয়া শুরু ইত্যাদি করতে চলে গেছে কয়েক বছর। এর মধ্যে নেপথ্যে আর কী কী ঘটেছে, তা এখনো অজানা। এ কয় বছর পরে এসে নিজের করা মামলার আসামিদের শনাক্ত করতে পারলেন না কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আর বন্ধন নাথের কাছে পাওয়া যাবে না। মামলার প্রধান আসামির হাত আদালতের চেয়েও বড় ভেবেই কি আদালতের ওপর ভরসা রাখতে পারলেন না বাদী?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত