Ajker Patrika

শিশুর সুরক্ষায় আইন

সম্পাদকীয়
শিশুর সুরক্ষায় আইন

আঁতকে ওঠার মতো একটি ঘটনা। নিজের ভাতিজাকে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে চাচার বিরুদ্ধে। ভাইয়ের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জের ধরে ভাবি ও ভাতিজার গায়ে আগুন ঢেলে পালিয়ে যান হোসাইন মোল্যা। মা আহত হলেও বাঁচেনি সাত বছরের ছোট্ট আব্দুর রহিম। ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ী ইউনিয়নের নড়াইল গ্রামে।

অনেকের হয়তো মনে আছে, ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটে চুরির সন্দেহে ১৩ বছর বয়সী শিশু রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্দয়ভাবে মেরে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। এরপরও বেশ কয়েকটি রোমহর্ষক শিশুহত্যার ঘটনা ঘটে। কিছু ঘটনায় আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার ও খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিশু-কিশোর হত্যা বন্ধ করা যায়নি।

যাপিত জীবনে আত্মীয় বা পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে মতানৈক্য থাকা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের বিরোধও থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি কাউকে হত্যা করতে হবে—সে শিশু হোক কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক? শুধু আইনের বিচারে নয়, একজন বিবেকবান মানুষ কখনো ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে একটি শিশুকে হত্যা করতে পারে না। যদি করে, তবে বুঝতে হবে খুনি ব্যক্তিটি অস্বাভাবিক কিংবা নির্দয় প্রকৃতির।

আমাদের সমাজে এখন উন্নয়ন যেমন ঊর্ধ্বমুখী, তেমনি এর বিপরীতে নিম্নমুখী হচ্ছে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি। ফলে সমাজে ব্যাপক মাত্রায় হিংস্রতা ও বর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায় শুধু আইন করে হত্যার মতো অপরাধ দূর করা যাবে না। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের রক্ষায়ও প্রচলিত আইনে সংশোধন আনতে হবে। যেকোনো ধরনের শিশু নির্যাতন হোক না কেন, এ ক্ষেত্রে রায় কার্যকরের সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।

শিশুদের ওপর পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে আরও কঠোর করা হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কেউ সাহস না পায়।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য যেন বাস্তবায়ন করা হয়—এমনটাই আমাদের আশা।

‘হত্যা করলেও পার পাওয়া যাবে’—এমন ধারণা শিশু হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। প্রত্যেক ঘাতককে আনতে হবে শাস্তির আওতায়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিশুহত্যার প্রতিটি ঘটনায় দ্রুতগতিতে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার সম্পন্ন করে দণ্ড কার্যকর নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার লাগাম টেনে ধরার এটাই প্রধান উপায়। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি। রাষ্ট্র ও সমাজের পরিবর্তন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদেরও এ বিষয়ে ভাবতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এই বিজয় বাংলাদেশি আন্টিদের বিজয়: জোহরান মামদানি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত