Ajker Patrika

জৈব কীটনাশকে কমেছে খরচ, বেড়েছে ফলন

মো. জহিরুল হক বাবু, বুড়িচং
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ১৮: ১৫
জৈব কীটনাশকে কমেছে খরচ, বেড়েছে ফলন

নিমপাতার রস ও মেহগনি বীজ থেকে ঘরোয়া পদ্ধতিতে জৈব কীটনাশক তৈরি করছেন কৃষক। এটি ব্যবহারে পোকামাকড় দূর হওয়ার পাশাপাশি ফসলের বিভিন্ন রোগবালাই কম হচ্ছে। এতে বেশি দামের রাসায়নিক কীটনাশকের খরচ কমে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ফলনও বাড়ছে। অপর দিকে বিষমুক্ত সবজি পাচ্ছেন ভোক্তারা।

এই পদ্ধতিতে সাফল্য পেয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম। তাঁকে এ কাজে সাহায্য করছে উপজেলা কৃষি অফিস।

এই কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এক কেজি নিমপাতা ছেঁচে রস বের করে তিন লিটার পানিতে মেশানো হয়। এটি ২০ মিনিট চুলায় তাপ দিলে লাল চায়ের মতো রং ধারণ করে। এরপর এক লিটার পানির সঙ্গে পাঁচ মিলি নিমতেল ও তিন গ্রাম ডিটারজেন্ট মিশ্রণ করা হয়। হাতের তৈরি এই কীটনাশক ছিটিয়ে দিলে পোকামাকড়, রোগবালাইয়ের আক্রমণ থাকে না।

এবার সিরাজুল ইসলাম এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এক একর জমিতে বিষমুক্ত টমেটো চাষে সাফল্য পেয়েছেন। তা ছাড়া মেহগনিগাছের বীজের ভেতরের সাদা অংশ ছেঁচে রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সকালে পরিমাণ মতো রসুন, ডিটারজেন্ট মিশ্রণ করে জমিতে ছিটানো যায়।

নিরাপদ এই সবজি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বুড়িচং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া টমেটো চাষের সাফল্যের পর পর্যায়ক্রমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বুড়িচং উপজেলার নিমসার, রামপুর, শংকুচাইল, ভারেল্লাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে কৃষকদের জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করাতে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শুরুতে উপসহকারী কৃষি অফিসারদের পাক্ষিক প্রশিক্ষণে জৈব বালাইনাশক তৈরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তাঁরা স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি চাষ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোছা. সুলতানা ইয়াসমিন জানান, প্রতিবছর টমেটো চাষ করলেও কীটনাশকের খরচ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ মিলিয়ে আর্থিকভাবে কৃষক লাভবান হতে পারছিলেন না।

কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে হাতে বালাইনাশক তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়েছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জমিতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। খরচ কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং ফলন হয়েছে দ্বিগুণ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, পোকা দমনে অতি মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার করা হতো। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি বিষ ছিটানোয় কৃষকেরা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন এবং প্রয়োজনে রাসায়নিক কীটনাশকের যুক্তিসংগত ব্যবহার বিষয়ে অভ্যস্ত করতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত