Ajker Patrika

বিদ্যালয় ঘিরে তিন ইটভাটা

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭: ০৪
বিদ্যালয় ঘিরে তিন ইটভাটা

গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের ৪৩ নম্বর দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির তিন পাশে আইন অমান্য করে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি ইটভাটা শাপলা, তানিয়া ও এমকেএম। ৩০০ গজের মধ্যে ইটভাটার কালো ধোয়ায় ছেয়ে থাকে বিদ্যালয়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শত শত শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইটভাটা মালিকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না। কাছাকাছি আর কোনো বিদ্যালয় না থাকায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়েই দূষিত পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠাচ্ছেন সন্তানদের।

অথচ নির্মল পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার শিশুদের অধিকারের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করছে। ইউনিসেফ কর্তৃক আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর ও এর বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। সে জন্য দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ সহকারে আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষে সারি সারি রাখা হয়েছে কাঁচা ইট। পাশেই ইটভাটার চিমনি। জ্বলছে আগুন, পোড়ানো হচ্ছে ইট। মাটি, কাঠ খড়ি, ইট বোঝাই করে ট্রাকের পর ট্রাক আসা-যাওয়া করছে। উচ্চ শব্দ, ধুলা আর ধোঁয়ায় টিকে থাকা দায়। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পাঠদান আর খেলাধুলা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ধোঁয়া, ছাই আর ধুলোবালিতে তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ক্লাস চলাকালীন ইটভাটার লরি ও ট্রাকের আসা-যাওয়ার কারণে প্রচণ্ড শব্দ হয়। এতে শিক্ষকের কথা শুনতে পায় না তারা।

এ বিষয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নন্দা দেবী বলেন, ২০০৮ সালে এ নিয়ে ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন তিনি। তদন্তও হয়েছে, কিন্তু ইটভাটা বন্ধ হয়নি। টাকা পয়সা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলেন প্রভাবশালী ইটভাটা মালিকেরা। সমস্যা নিয়ে কথা বলতে এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।

শাপলা ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মো. স্বপন মিয়া বলেন, ২০০৭ সালে তিনি ইটভাটাটি স্থাপন করেছেন। তবে বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা স্থাপনের কারণ জানতে চাইলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

গৌরীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন বলেন, আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই, নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করতে হয়। দাড়িয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে স্থাপিত ইটভাটাগুলোয় এ আইন মানা হয়নি।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, ২০০৮ সালে করা অভিযোগের বিষয়টি জানেন না তিনি। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবেন।

ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন-২০১৩ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভাটা স্থাপন করা যাবে না। শাপলা, তানিয়াসহ বেশির ভাগ ইটভাটা অনুমোদনহীন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত