Ajker Patrika

লোডশেডিং বিষয়ে

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ১০: ৪৯
লোডশেডিং বিষয়ে

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে যে কঠিন সংকট তৈরি হতে পারে, তা মোকাবিলা করার জন্য সরকার কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। জ্বালানি সাশ্রয়ে এর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছে 

সরকার। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এলাকাভেদে এক ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের কথা ভাবা হয়েছে, সপ্তাহে এক দিন পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিস্তার শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর নানা দেশ, মহাদেশকে চিন্তায় ফেলে দেবে, সে কথা যুদ্ধের শুরুতে কেউ এতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি। দিন যত যাচ্ছে, সারা বিশ্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য ও পণ্য পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে; বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর মানুষ ভয়াবহতার মুখোমুখি হচ্ছে। সেই সঙ্গে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া অবিশ্বাস্য ঘটনাগুলো অশক্ত অর্থনীতির দেশগুলোকে সত্যিই আরও বেশি করে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

কুইক রেন্টালসহ নানা ধরনের যে বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাতে দেশের সাধারণ মানুষের যতটা সুবিধা হয়েছে তার চেয়ে বেশি সুবিধা হয়েছে যারা ব্যবসাটা পেয়েছিল, তাদের। হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে গিয়ে আমদানিনির্ভর একটি চক্রে পড়েছে বাংলাদেশ। ফলে যুদ্ধের পথ ধরে ডলারের উচ্চমূল্যসহ যে সংকট দ্রুত এগিয়ে আসছে, তা মোকাবিলা করার ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। পৃথিবীর বহু দেশের বিশেষজ্ঞরা জ্বালানিস্বল্পতার কারণে কী কী ঘটতে পারে, কীভাবে সে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ছেন। বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তার খবর আসে। বাংলাদেশ কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবে, সেটা ভাবতে হবে বাংলাদেশকেই এবং সে ভাবনায় আন্তরিক হতে হবে।

লোডশেডিংয়ের ভাবনাটি যদি সময়োপযোগী হয়, তাহলে তা মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু সে জন্য জ্বালানি ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্তগুলো যেন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে হয়, সেটা নির্দিষ্ট করা জরুরি। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, এ বিষয়টি সরকার খতিয়ে দেখেনি।

করোনার ভয়াবহতা একটু একটু করে কেটে যাওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতিও একটু একটু করে জেগে উঠছে। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যে পরিমাণ অর্ডার আসছে এই শিল্পে, তাতে রপ্তানি আয় বাড়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। লোডশেডিংবিষয়ক ভাবনাগুলো যখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাথায় আসবে, তখন বিদেশি মুদ্রা আয় করে যেসব শিল্প, সেই সব শিল্পে ছাড় দেওয়ার একটা ভাবনা থাকা দরকার। বাড়িতে মানুষ কিছু সময়ের জন্য লোডশেডিং মেনে নিক, কিন্তু তা যেন রপ্তানি কাজে নিয়োজিত শিল্পকে বাধাগ্রস্ত না করে। যে চরম সংকটের দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব, তাতে নিজ দেশকে বাঁচানোর জন্য কৃচ্ছ্রসাধন জরুরি। আর সেটা সরকারের একার ব্যাপার নয়। সব সেক্টরের মানুষকেই সংযমী আচরণ করতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতীয় ঐক্যও জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত