Ajker Patrika

‘মিছিলে আওয়াজ ছিল, আগুন ছিল’

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ৪৫
‘মিছিলে আওয়াজ ছিল, আগুন ছিল’

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। রেডিওতে শুনলেন ঢাকায় গোলাগুলি হয়েছে। মেরে ফেলা হয়েছে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে। তাৎক্ষণিক স্কুলের ৮ থেকে ১০ জন বন্ধু নিয়ে রাস্তায় মিছিলে নেমে পড়েছিলেন নবম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মালিক।

ছাত্রদের মিছিল দেখে সেদিন তাতে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। মুহূর্তে কয়েকজনের মিছিল দুই শতাধিকের মিছিলে পরিণত হয়।

মুষ্টিবদ্ধ হাতে, বীরকণ্ঠে স্লোগানে বের হওয়া আব্দুল মালিক কুলাউড়ার বাসিন্দা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক-ভাষাসৈনিক। ১৯৩৪ সালের ২৩ জুন কুলাউড়ার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পৃথিমপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মো. ইলিম, মা ছবরুননেছা খাতুন।

সেই দিনের স্মৃতিচারণায় ৯০ বছর বয়স স্পর্শ করা আব্দুল মালিক বলেন, ‘রেডিওতে শুনলাম ঢাকায় গোলাগুলি হয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন বেশ কয়েকজন ছাত্র। তাৎক্ষণিক সৈয়দ মহিউদ্দিন মনর, আব্দুল কাইয়ুম, তজমূল আলীসহ ৮ থেকে ১০ জন স্কুলের ছাত্র নিয়ে রাস্তায় মিছিলে নেমে পড়ি। সেই মিছিলে আওয়াজ ছিল, আগুন ছিল। মিছিল শেষে বৈঠক করি, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের দিন স্কুলের সব ছাত্র সঙ্গে নিয়ে ক্লাস বর্জন করি। সেই মিছিল স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছিলাম বিভিন্ন ইউনিয়নে।’

পরপর দু্দিন স্থানীয়ভাবে মিছিল-মিটিং হলেও পরে কেন্দ্রের ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হন বলে তিনি জানান।

আব্দুল মালিক বলেন, ‘যাদের নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, আজ তাঁরা কেউ বেঁচে নেই।’ এ কথা বলেই দুচোখ মুছলেন সেই দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আব্দুল মালিক।

সিপিবি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিলিমেষ ঘোষ বলু জানান, আব্দুল মালিক বায়ান্নর ভাষাসংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে ছাত্র, যুব ও জনতাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁকে একজন ভাষাসৈনিকও বলা চলে।

আব্দুল মালিকের রাজনৈতিক সহচর আব্দুল লতিফ জানান, ভাষা আন্দোলন ছাড়াও আব্দুল মালিক বাষট্টির আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হন। প্রায় চার মাস কারাবরণ করেন তিনি। এরপরও ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনে নিজেকে সক্রিয় রাখেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে অস্ত্র হাতে না নিলেও আগরতলা আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাংলার মুক্তিসেনাদের মধ্যে গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন রসদ জোগান, খবরাখবর আদান-প্রদান করেন। তিনি আজীবন পাহাড় আন্দোলন, কৃষক শ্রমিকের অধিকার আদায় আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে সক্রিয় থেকেছেন। বর্তমানে কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তিনি।

জীবনের শেষ সময়ে বিভিন্ন রোগবালাইয়ে ন্যুব্জ হয়ে পড়া এই সংগ্রামী অনেকটা নীরবে শেষ সময় কাটাচ্ছেন। স্বপ্ন দেখেন সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। এমন সমাজ একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে সেটাই তিনি বিশ্বাস করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজারে একুশে ফেব্রুয়ারি (গতকাল) ভাষাসৈনিক আব্দুল মালিককে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি আরও তিনজন মৃত্যুবরণকারী ভাষাসৈনিকের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত