Ajker Patrika

পুরোনো সেই রাসমেলা

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ৩৬
পুরোনো সেই রাসমেলা

ধুলো আর কুয়াশামাখা গোধূলি পেরিয়ে এই মধ্য নভেম্বরে মৃদু শীতের সন্ধ্যা নেমেছে একটু আগে। ঢেপা নদীর পূর্ব তীর থেকে এখন আর কান্তজিউ মন্দির চূড়ার গেরুয়া নিশান চোখে পড়ছে না। বদলে সেখানে ঘিরে আছে একরাশ অন্ধকার। কিন্তু ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে কান্তজিউ মন্দিরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রায় ৩০০ বছরের গল্প নিয়ে বসেছে রাসমেলা! সারি সারি দোকান তখনো ঝাঁপ বন্ধ করেনি। কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্রের দোকান, মিষ্টি-মণ্ডা আর খেলনার দোকান কিংবা কাঠের আসবাবের দোকানে তখনো বিজলিবাতি জ্বলছে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। ইট-সিমেন্টে তৈরি করা চত্বরে বসার জায়গা আছে বেশ কিছু। ফিরে যাওয়ার আগে শানবাঁধানো গাছের গোড়ায় বসে জিরোচ্ছেন মেলায় আসা মানুষেরা। হঠাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এলেন পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী! সুযোগ হাতছাড়া না করে কথা জমালাম। পুরো মেলা ঘুরে দেখেছেন তিনি। জানালেন, কান্তজিউ মন্দিরের রাসেমেলা সময় খারাপ কাটেনি তাঁর।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে ঢেপা নদীর পশ্চিম তীরে কান্তনগর নামের গ্রামটি বেশ প্রাচীন। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে দিনাজপুরের রাজারা এখানে নির্মাণ করেছিলেন টেরাকোটাশোভিত বিখ্যাত কান্তজিউ মন্দির। ‘প্রায়’ বলা হচ্ছে, কারণ মন্দিরটি তৈরির সময় নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। এ বি এম হুসাইন কিংবা আহমেদ নাজিমুদ্দিনের মতো গবেষকেরা বলেছেন, এর নির্মাণকাজ ১৭০৪ সালে শুরু হয়ে ১৭২২ সালে শেষ হয়। আর জনপ্রিয় মত হচ্ছে, এর নির্মাণকাজ ১৭২২ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ১৭৫২ সালে।

মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথা অনুসারে, জন্মাষ্টমীর আগের দিন পুনর্ভবা নদী ধরে বিশাল নৌবহরে কান্তজিউ মন্দির থেকে কৃষ্ণের মূর্তি দিনাজপুর রাজবাড়ির মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ মূর্তি সেখানে থাকে তিন মাস। তারপর রাস পূর্ণিমার এক দিন আগে ভক্ত-পুণ্যার্থীরা হেঁটে কৃষ্ণের বিগ্রহ রাজবাড়ি মন্দির থেকে কান্তজিউ মন্দিরে নিয়ে আসেন। প্রতিবছর এ সময় মাসব্যাপী মেলা বসে মন্দির প্রাঙ্গণে। ধারণা করা হয়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ মন্দির প্রাঙ্গণে রাস উৎসব এবং মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে সূত্রে এ মেলার বয়স ৩০০ বছর, মতান্তরে ২৭০ বছর।

করোনার জন্য গত দুই বছর মেলা না হলেও এবার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ মেলা বসেছে মন্দিরের বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণজুড়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা, ঘোরাঘুরি আর খাওয়াদাওয়া। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মেলায় আসছেন ভক্ত, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা।

৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কান্তজিউ মন্দিরের রাস মেলা চলবে মাসব্যাপী। অগ্রহায়ণের এই মৃদু শীতে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দেশের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা থেকে। ঢাকা থেকে সড়কপথ ও রেলপথে যেতে হবে দিনাজপুর শহরে। আকাশপথে গেলে সৈয়দপুরে নেমে সোজা চলে যাওয়া যায় কান্তজিউ মন্দিরে। দিনাজপুর থেকে বাসে বা যেকোনো বাহনে যেতে হবে কান্তনগর মোড়। সেখান থেকে ঢেপা নদী পেরিয়ে কান্তজিউ মন্দিরের মেলা। মধ্য নভেম্বরে উত্তরবঙ্গে শীত বেশ। তাই গরম কাপড় নিতে যেতে ভুলবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‎জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তাঁর ছাত্রী সপরিবারে পুলিশ হেফাজতে

পুরান ঢাকায় বাসার সিঁড়িতে জবি ছাত্রদল নেতার রক্তাক্ত লাশ

৪৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১২১৯

ফরিদপুরে এ কে আজাদের গণসংযোগে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর

ভিডিও কলে ‘বিয়ে’: দেশে ফিরে দেখেন আরেকজনের স্ত্রী, অতঃপর কারাগারে

এলাকার খবর
Loading...