Ajker Patrika

এমন করুণ মৃত্যু আর কত!

সম্পাদকীয়
এমন করুণ মৃত্যু আর কত!

ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে লাশ হয়েছেন বাবা কিংবা মায়ের চিকিৎসা করানোর ইচ্ছা পূরণ হয়নি ছেলের অথবা একই পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে বিষাদভারাক্রান্ত গোটা পরিবার।

রোববার আজকের পত্রিকায় ‘চালকের মন পেছনে, পুকুরে বাস’ শিরোনামের খবরটি পড়ে সব পাঠকের মনই বেদনার্ত হয়ে উঠবে। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে প্রাত্যহিক ঘটনা। প্রতিদিনই কত পরিবারে হাহাকার নেমে আসছে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। এর যেন কোনো প্রতিকার নেই।

আজকের পত্রিকার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক ঘেঁষে পুকুর। সেই সড়ক ধরেই চলছিল ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া গতির একটি বাস। স্টিয়ারিংয়ে মন ছিল না চালকের। যাত্রীরা সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি বারবার পেছন ফিরে সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। বাসটি সোজা গিয়ে পড়ে সেই পুকুরে। প্রাণ হারান শিশুসহ বাসটির ১৭ আরোহী। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৪ জন।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন এলাকায় গত শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

তদন্ত করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে কিংবা তারপর অপরাধী, অর্থাৎ চালকের কোনো শাস্তি হবে—এটা হয়তো কেউ আশা করে না। আমাদের দেশে কেন এত সড়ক দুর্ঘটনা হয়, তার কারণ কি আমাদের অজানা? কারণ জানার পরও প্রতিকারের দিকে আমাদের অমার্জনীয় অবহেলার বিষয়টি কোনোভাবে ব্যাখ্যা করে কি দায়মোচন সম্ভব? প্রধানত সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে চালকের অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে। তবে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে চালকের খামখেয়ালিপনা, অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে। চালক সতর্ক থাকলে লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি নিয়ে ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল করলেও দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কিন্তু চালক অদক্ষ হলে, অমনোযোগী হলে এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালে মসৃণ সড়কে নতুন গাড়ি নিয়েও দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা থাকেই।

দুর্ঘটনার বড় দায় চালকের হলেও আমাদের দেশে কোনো চালককে শাস্তির আওতায় আনা সহজ নয়। শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকফোকর তো একটি অন্তরায় বটেই কিন্তু তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবহনশ্রমিকদের সংঘশক্তি। পরিবহনশ্রমিকেরা সংগঠিত এবং বেপরোয়া মনোভাবাপন্ন। নিজেদের কোনো দোষ তাঁরা মানতে চান না। কোনো দুর্ঘটনার কারণে কোনো চালককে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর মুক্তির দাবিতে এমন আন্দোলন করা হয়, যা জনজীবন অচল করে দেয়। ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে বসবাস করাই যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনার পরিমাণও বেড়ে গেছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, এক বছরে বরিশাল বিভাগে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। আঞ্চলিক সড়কগুলোর মান তুলনামূলক ভালোর দিকে গেলেও চালক ও পরিবহনের মান ভালো না হওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত