Ajker Patrika

তারাগঞ্জে মাশরুমে রঙিন গোলাপী বেগমের জীবন

শিপুল ইসলাম, শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ৪৩
তারাগঞ্জে মাশরুমে রঙিন গোলাপী বেগমের জীবন

দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন গোলাপী বেগম। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা করিয়েও প্রতিকার পাচ্ছিলেন না। একদিন খোঁজ পান সৈয়দপুরের আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তির। তাঁর কাছে চিকিৎসা নেন গোলাপী। চিকিৎসার প্রধান উপাদান ছিল মাশরুম। মাশরুমের তৈরি ওষুধ সেবন করে সুস্থ হয়ে ওঠেন এই নারী।

মাশরুমে উপকার পেয়ে গোলাপী পরে নিজের প্রয়োজনে অল্প পরিসরে এর চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি এখন বাণিজ্যিকভাবে মাশরুমের চাষ করছেন। প্রতিদিন বিক্রির পরিমাণ ৯ হাজার টাকা।

গোলাপী তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে পাকা সড়ক ধরে যেতে হয় তাঁর বাড়িতে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে মাশরুমের পরিচর্যা করছেন।

গোলাপী জানান, সৈয়দপুরের আজিজুল হক মূলত মাশরুম দিয়ে বিভিন্ন ধরেন ওষুধ ও তেল তৈরি করে চিকিৎসাসেবা দেন। পাশাপাশি মাশরুমের চাষও করেন। গোলাপীও নিজের প্রয়োজনে প্রথমে অল্প পরিমাণে চাষ শুরু করেন। তিনি গত বছরের জুনে আজিজুলের ফাতেমা মাশরুম সেন্টারে চাষের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বাড়িতে এসে স্বামী-সন্তানদের সহযোগিতায় পুরোদমে চাষ শুরু করেন। এখন তাঁর খামারে বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন লোকজন তাঁর বাড়িতে এসে মাশরুম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

গোলাপীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য আকতারুল ইসলাম বলেন, মাশরুম চাষের জন্য তিনটি উপাদান প্রয়োজন। খড়, স্পন বা বীজ ও পলিথিন। প্রথমে আধা থেকে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে জীবাণুমুক্ত করতে হয়। খড়ের পানি এমনভাবে ঝরিয়ে নিতে হবে যাতে হাত দিয়ে খড় চাপলে পানি না পড়ে। এরপর পলিব্যাগের মধ্যে দুই ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার ওপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। বীজের ওপরে আবার খড় ও খড়ের ওপর আবার বীজ, এইভাবে প্রায় সাত থেকে আটটা স্তর তৈরি করে ব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে কষে বন্ধ করে দিতে হয়।

খড় বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে ভালো করে চেপে দিতে হয়, যাতে খড়ের ভেতর বাতাস জমে না থাকে। এরপরে প্যাকেটে দশ থেকে বারোটা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখ বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক হাওয়া চলাচল বজায় থাকবে, আবার তুলা থাকায় ধুলাও ঢুকতে পারবে না। পরে ৩০ থেকে ৩৩ দিনের মধ্যে মাশরুম খাওয়ার মতো পরিণত হয়ে যায়। একটি ব্যাগ থেকে তিনবার ফলন পাওয়া যায়। মাছি মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে বলে জানান আকতারুল।

গোলাপী জানান, তিনি প্রতিদিন ৩০ কেজি করে মাশরুম পাচ্ছেন। পুরোদমে উৎপাদনে গেলে ৫০ কেজি পাবেন। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে বিভিন্ন লোকজন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শুকিয়ে বিক্রি করলে প্রতি কেজি দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মাশরুম চাষে একবারই খরচ হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, ‘মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। গোলাপীর মাশরুমের খামার আমরা পরিদর্শন করেছি। তাঁকে সব ধরনে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরাও তাঁর খামার থেকে মাশরুম কিনছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫): ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত